বিভূতিভূষণের ভিটে বাড়ি, পথের পাঁচালির গ্রাম পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে! হেলদোল নেই কারও

উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর-শ্রীপল্লীতে বিভূতিভূষণের পৈতৃক ভিটের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। গোপালনগর স্টেশনে নেমে মিনিট দশেকের পথ গেলেই দেখা যাবে প্রখ্যাত সাহিত্যিকের পুরাতন ভিটেবাড়িটি।
বিভূতিভূষণের ভিটে বাড়ি, পথের পাঁচালির গ্রাম পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে! হেলদোল নেই কারও
ছবি - সংগৃহীত
Published on

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় নাম। শুধু বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি, তাঁর কাজ আজও বিভিন্ন সময়ে শিল্পকর্মে প্রয়োগ হয়ে থাকে। সেই বিভূতিভূষণের ভিটেই আজ সংকীর্ণ অবস্থায় প্রায় ধ্বংসের পথে। বিভূতিভূষণের লেখার ওপর ভিত্তি করে পথের পাঁচালি, অপরাজিত, আদর্শ হিন্দু হোটেল, নিশিপদ্ম, অশনি সংকেত, আলো, চাঁদের পাহাড় ইত্যাদি একাধিক কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শ্রীপল্লীতে বিভূতিভূষণের পৈতৃক ভিটের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। বাসবাড়িটির অল্পবিস্তর সংরক্ষণ হলেও আপাতত তা অবহেলাতেই রয়েছে। রানাঘাট রেললাইনের গোপালনগর স্টেশনে নেমে টোটোতে মিনিট দশেকের পথ গেলেই দেখা যাবে প্রখ্যাত সাহিত্যিকের পুরাতন ভিটেবাড়ি। সড়কপথেও সরাসরি যাওয়া যায় শ্রীপল্লীর এই বাড়িতে। সাহিত্যিকের ভিটেবাড়ির অবস্থা শোচনীয়। গাছের পাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে উঠোনে। প্রধান ফটকদ্বার খোলা থাকলেও সব ঘরের দরজা থাকে তালাবন্ধ। কাঁটাতার দিয়ে বেড়া দেওয়া। বাড়িতে নেই কোনও পরিচর্যাকারী।

ইতিপূর্বে, জায়গাটি পরিচিত ছিল ‘চালকি-বারাকপুর’ নামে। বিভূতিভূষণের বাড়ির জায়গাটির অধুনা পরিচিতি বারাকপুর-শ্রীপল্লী নামে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা শিক্ষক সমরেশ মুখোপাধ্যায়ের কাছে থাকে বাড়ির চাবি। তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। জীবনের শেষ দশ বছর বারাকপুরের এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরদা তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ভিটে এখন মাটির ঢিবিতে পরিণত হয়েছে। সেই মাটির ঢিবি আবার লোকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। জমি-জায়গাও বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। সমরেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ভিটেতে বাস করেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিভূতিভূষণের শৈশবও এই ভিটেতেই কেটেছিল। শেষ বয়সে ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ওই বাড়িতে কাটিয়েছিলেন ছিলেন বিভূতিভূষণ স্বয়ং।”

প্রসঙ্গত, পথের পাঁচালি উপন্যাসে তাঁর ছোটবেলার বর্ণনা আছে এবং তাঁর পরিবারের কথা আছে। বিভূতিভূষণের ডায়েরি পড়লেও বোঝা যায়, এই গ্রামকে তিনি ভুলতে পারেননি। বিভূতিভূষণের লেখাতে ও স্বীকারোক্তিতে দেখা যায় পথের পাঁচালির পটভূমি এই গ্রামকে কেন্দ্র করেই এগোয়। ইছামতীর ধারের এই গ্রাম ও মানুষজনের কথাও আছে উপন্যাসে। তাঁর বিভিন্ন ছোট গল্পেও এই গ্রামের কথা উঠে এসেছে।

প্রখ্যাত সাহিত্যিকের পুরাতন ভিটের সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছেন গবেষক সমরেশ মুখোপাধ্যায়। তাঁদের দাবী, এখানে বিভূতিভূষণ সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক। বিভূতিভূষণের সম্পত্তি ও স্মৃতিবিজরিত জায়গা সংরক্ষণ, অডিটোরিয়াম ও একটি সংগ্রহশালা, লাইব্রেরি এবং বিভূতি অ্যাকেডেমি করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সে ব্যাপারে আলাচনা চলছে। একটি প্রকৃত অর্থে কমিটি তৈরি করে পুরো বিষয়টি বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে, আলোচনাটি ফলপ্রসু হবে। এব্যাপারে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে।

বিভূতিভূষণের ভিটে বাড়ি, পথের পাঁচালির গ্রাম পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে! হেলদোল নেই কারও
Alexandria: শতাব্দী প্রাচীন গ্রেকো রোমান শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in