‘দেশে আদর্শের ধ্বংসযজ্ঞ চলছে’ বলে দাবি করেছেন পদ্মভূষণ জয়ী প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মল্লিকা সারাভাই। রবিবার, কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে দেশজুড়ে হিন্দুত্বের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন গুজরাটের ৬৪ বছর বয়সী নৃত্যশিল্পী।
তিনি বলেন, ‘দেশে সব আদর্শকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দু ধর্মের নামে জোর করে সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করে চলেছে হিন্দুত্ববাদীরা। বিজ্ঞাপনের চমকে আর ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ে অধিকাংশ মানুষ অন্ধ হয়ে পড়েছেন।’
'আমি আজকে চারপাশে যা দেখছি তা আমাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়... আমি কখনই ভাবিনি যে ভারতে আমাদের আদর্শের সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে', বলেন নৃত্যশিল্পী।
রবিবার এপিজে লিটারারি ফেস্টের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃত্যশিল্পী। নিজের কর্মজীবন আর নাচ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন পদ্মভূষণ জয়ী নৃত্যশিল্পী।
তাঁর কথায়, ‘আজকে চারপাশে যা ঘটছে, তা দেখে আমি হতাশ। আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবতে পারিনি, আমার দেশের আদর্শগুলিকে এভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। হিন্দু ধর্মের নামে হিন্দুত্ববাদীরা মানুষের কণ্ঠরোধ করবে।’
এদিন সারাভাই বলেন, ‘হিন্দু ধর্ম আমাদের প্রশ্ন করার কথা শেখায়। আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলিতেও সেকথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ, সেই প্রশ্ন তোলার দায়ে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁরা আজ জেলে রয়েছেন।’
কলকাতা শহরে যেভাবে ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু-মুসলিম সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করছেন তার প্রশংসাও করেছেন মল্লিকা সারাভাই।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা পাই কলকাতায় এসে। কলকাতায় এসে এটা দেখে ভাল লাগছে যে এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ (ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে) পাশাপাশি বসবাস করছেন। একে অন্যের সুখদুঃখের সাথী হচ্ছেন। গুজরাটে এই দৃশ্য আমি কখনও দেখিনি। সেখানে তো ধর্মের নামে ঘৃণা আর বিদ্বেষের রমরমা চলছে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৮০-র দশকে পিটার ব্রুকের নাটক 'দ্য মহাভারত'-এ দ্রৌপদীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মল্লিকা সারাভাই। এছাড়া, বেশ কয়েকটি হিন্দি, মালায়ালম, গুজরাটি ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে তিনি থিয়েটারে শক্তি নামক নাটকে অভিনয় করেন, যা ছিল নারী শক্তি বিষয়ে একটি অনন্য উপস্থাপন। তাঁর অভিনীত 'সীতা কন্যা' সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এটি তিনটি ভাষায় ৫০০ বারের অধিক অভিনীত হয় ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন