সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন একটু একটু করে ভেঙে পড়ছে লখনউয়ের ঐতিহাসিক ছোট ইমামবাড়া। লাল পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি পাতলা লাখৌরি ইট দিয়ে তৈরি এই ইমামবাড়া খোলা পড়ে আছে এবং এর স্তম্ভ ও দেয়াল থেকে প্লাস্টার বেরিয়ে আসছে।
১৮৩৭ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্যে এই ইমামবাড়া তৈরি করেন নবাব মহম্মদ আলি শাহ। যে ইমামবাড়ার মধ্যে এখন হোটেল, কিয়স্ক এবং একটি পুলিশ চৌকিও আছে।
২০১৪ সালে হুসেনাবাদ এবং অ্যালাইড ট্রাস্ট (HAT) কে এই ইমামবাড়া রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হলেও কোন কাজ করা হয়নি। সংস্থার কর্মীরা সম্প্রতি পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সহ কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছে।
কর্মীদের পক্ষ থেকে ইমামবাড়ার দরজাগুলির জরাজীর্ণ অবস্থা্র কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে ‘বরাউনি দরজা’, যার অবস্থা খুবই খারাপ বলেও জানানো হয়েছে। কর্মীরা দাবি করেছেন যে, তারা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই), লখনউ কমিশনার এবং পুলিশকে একটি চিঠি লিখে, ছোট ইমামবাড়ার পূর্ব গেটটি সংস্কারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
২০১৪ সালা হাইকোর্টের আদেশের পর ইমামবাড়া সংস্কারের জন্য ১২ লক্ষ টাকা বাজেট মঞ্জুর হয় এবং ২০১৫ সালে মেরামতির কাজ শুরু করা হয়। সেই সময় পশ্চিম দরজার কোনও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। যার ফলে এটির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
সংস্কৃতি কর্মী মোহাম্মদ হায়দার এই ইমামবাড়া প্রসঙ্গে বিগত কয়েক বছর ধরে বারবার তার উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ১৮১ বছরের পুরানো ঐতিহ্য দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে, পুলিশ, যাদের দায়িত্ব দখলমুক্ত করা, তারাও এখানে চৌকি করে রেখেছে।"
প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ নাদিম হাসনাইনও লখনউ শহরের পুরোনো স্মৃতিস্তম্ভগুলির শোচনীয় অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
হাসনাইন সংরক্ষণের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য হুসাইনাবাদ ট্রাস্টের সমালোচনা করেন এবং সংরক্ষণ প্রচেষ্টার বিষয়ে উদ্যোগী হবার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
তিনি লখনউয়ের এই অনন্য ঐতিহ্যমণ্ডিত স্মৃতিস্তম্ভ রক্ষা করতে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত সিটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং হুসাইনাবাদ ট্রাস্টের প্রতিনিধি ব্রিজেশ ভার্মা জানিয়েছেন, “আমরা পুলিশকে এক মাসের মধ্যে দখলগুলি অপসারণের জন্য অনুরোধ করেছি। এছাড়াও, আমরা পশ্চিম গেটের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন। বর্তমানে বড় ইমামবাড়ার রুমি গেট পুনরুদ্ধারের কাজ করছে ASI। আমরা ছোট ইমামবাড়া এবং এর গেটগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য এএসআইকে এক সমীক্ষা করার আবেদন জানাবো।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন