NCERT: নতুন পাঠ্যপুস্তকে বাবরি মসজিদ বদলে 'তিন গম্বুজ কাঠামো - কী জানালেন NCERT ডিরেক্টর সাকলানি?

People's Reporter: NCERT পাঠ্যপুস্তকে গুজরাট দাঙ্গা বা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা বাদ দেওয়া সম্পর্কে সাকলানি বলেন, "কেন আমরা পাঠ্যপুস্তকে দাঙ্গা সম্পর্কে শেখাবো? আমরা ইতিবাচক নাগরিক তৈরি করতে চাই।"
NCERT-এর ডিরেক্টর দীনেশ প্রসাদ সাকলানি
NCERT-এর ডিরেক্টর দীনেশ প্রসাদ সাকলানিছবি দ্য প্রিন্ট থেকে সংগৃহীত
Published on

"গুজরাট দাঙ্গা এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মত বিষয়গুলি স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন করা হয়েছে, কারণ দাঙ্গা সম্পর্কে শিক্ষা "হিংসাত্মক এবং হতাশাগ্রস্ত নাগরিক তৈরি করতে পারে।" স্কুল পাঠ্যক্রমের গৈরিকিকরণের অভিযোগ খারিজ করে, NCERT-এর ডিরেক্টর দীনেশ প্রসাদ সাকলানি শনিবার একথা জানিয়েছেন।

শনিবার নয়াদিল্লীতে পিটিআই সদর দফতরে সংস্থার সম্পাদকদের সাথে এক আলোচনায়, ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT) এর পরিচালক দীনেশ প্রসাদ সাকলানি জানিয়েছেন, পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন বার্ষিক সংশোধনের অংশ এবং এই বিষয়ে শোরগোল করা উচিত নয়।

এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তকে গুজরাট দাঙ্গা বা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা বাদ দেওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, সাকলানি বলেন, "কেন আমরা স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে দাঙ্গা সম্পর্কে শেখাবো? আমরা ইতিবাচক নাগরিক তৈরি করতে চাই। হিংসাত্মক এবং হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি নয়"।

তিনি আরও বলেন, "আমাদের কি শিক্ষার্থীদের এমনভাবে শেখানো উচিত, যাতে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, সমাজে ঘৃণা সৃষ্টি করে বা ঘৃণার শিকার হয়? এটাই কি শিক্ষার উদ্দেশ্য? আমাদের কি এই ধরনের ছোট বাচ্চাদের দাঙ্গা সম্পর্কে শেখানো উচিত ... যখন তারা বড় হবে, তখন তারা এই বিষয়ে জানতে পারে। কিন্তু তার জন্য স্কুলের পাঠ্যপুস্তক কেন? তারা বড় হয়ে গেলে বিষয় সম্পর্কে জানুক যে কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল। এখুনি এই বিষয়ে শোরগোল অপ্রয়োজনীয়।

সম্প্রতি NCERT-র পাঠ্য পুস্তক থেকে বেশ কিছু অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে এবং কিছু বদল আনা হয়েছে। এর পরেই পিটিআই-এ এক আলোচনায় এ কথা জানিয়েছেন সাকলানি।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ শ্রেণীর সংশোধিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে বাবরি মসজিদের উল্লেখ নেই, তবে এটিকে "তিন গম্বুজ কাঠামো" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অযোধ্যা বিভাগ সম্পর্কিত আলোচনা চার থেকে কমিয়ে দুই পৃষ্ঠায় আনা হয়েছে এবং পূর্ববর্তী সংস্করণ থেকে এই বিষয়ের বিশদ তথ্য মুছে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও পাঠ্যপুস্তক থেকে গুজরাটের সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত বিজেপির 'রথযাত্রা'; কর সেবকদের ভূমিকা; বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক হিংসা; বিজেপি শাসিত রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বিষয়গুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার জন্য বিজেপির পক্ষ থেকে "অযোধ্যার ঘটনার জন্য অনুতপ্ত" বলে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল তাও বাদ পড়েছে।

পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকের গৈরিকিকরণের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সাকলানি বলেন, "যদি কিছু অপ্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে ... তা পরিবর্তন করতে হবে। অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিত। আমি এখানে কোনো গৈরিকিকরণ দেখতে পাচ্ছি না। আমরা ইতিহাস শেখাই। তাই ছাত্ররা ঘটনা সম্পর্কে জানবে, পাঠ্যপুস্তক যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর জন্য নয়।"

এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, "বিশ্বজুড়ে পাঠ্যপুস্তক আপডেট করা হয়ে থাকে। শিক্ষার স্বার্থে তা করা হয়। পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করা একটি বার্ষিক অনুশীলন। যা পরিবর্তন করা হয় তা বিষয় এবং শিক্ষাবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্ধারিত হয়। আমি এই প্রক্রিয়ায় নির্দেশ বা হস্তক্ষেপ করি না। ... উপরে থেকে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়না। তিনি আরও বলেন,  "পাঠ্যক্রমকে গৈরিকিকরণ করার কোন প্রচেষ্টা নেই, সবকিছুই তথ্য ও প্রমাণের উপর ভিত্তি করে করা হয়।"

সাম্প্রতিক সময়ে NCERT জাতীয় শিক্ষা নীতি (NEP) ২০২০-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যক্রম সংশোধন করছে। মুঘল সম্রাট যেমন হুমায়ুন, শাহজাহান, আকবর, জাহাঙ্গীর এবং আওরঙ্গজেবের কৃতিত্বের বিবরণ দিয়ে একটি দুই পৃষ্ঠার সারণীও সাম্প্রতিক সময়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে NCERT পাঠ্যপুস্তকগুলির সংশোধন এবং আপডেটের এটি চতুর্থ রাউন্ড।

অযোধ্যা বিষয়ক ধারায় পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে, এনসিইআরটি এপ্রিলে জানিয়েছিল - "রাজনীতির সর্বশেষ বিকাশ অনুসারে বিষয়বস্তু আপডেট করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় দ্বারা আনা সর্বশেষ পরিবর্তনের কারণে অযোধ্যা ইস্যুতে পাঠ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংশোধন করা হয়েছে।"

সাকলানির মতে, কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে কারণ কিছু বিষয় অপ্রাসঙ্গিক ছিল। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে এবং কিছু নতুন তথ্য আপডেট করার জন্য পুরোনো কিছু বিষয় আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

২০২২ সালে এনসিইআরটি ডিরেক্টর হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে এইচএনবি গাড়ওয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ইতিহাস বিভাগের প্রধান ছিলেন সাকলানি। সাম্প্রতিক সময়ে পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে, বিশেষ করে ঐতিহাসিক তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে বদলের জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, NCERT-র পুরানো পাঠ্যপুস্তকে বাবরি মসজিদকে ১৬ শতকের একটি মসজিদ হিসাবে বলা হয়েছিল, যা মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেছিলেন। পরিবর্তনের পর, এই অধ্যায়ে বাবরি মসজিদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, একটি তিন গম্বুজ কাঠামো (যেটি) ১৫২৮ সালে শ্রীরামের জন্মস্থানের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল, তবে কাঠামোটির ভিতরের পাশাপাশি বাইরের অংশেও হিন্দু চিহ্ন এবং ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব ছিল।

এছাড়াও পুরানো পাঠ্যপুস্তকে সেই সময়ের কিছু খবরের কাগজের কাটিং ছাপা হয়েছিল। যার মধ্যে একটি ছিল ৭ ডিসেম্বর, ১৯৯২ এর শিরোনাম সহ "বাবরি মসজিদ ধ্বংস, কল্যাণ সিং সরকারকে বরখাস্ত করলো কেন্দ্রীয় সরকার।" এছাড়াও ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৯২ এর আরেকটি শিরোনামের কাটিং ছাপা ছিল, যেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহার বাজপেয়ীর উদ্ধৃতির উল্লেখ ছিল। যেখানে তিনি বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। বর্তমান মুদ্রণে এই সমস্ত সংবাদপত্রের ক্লিপিংস বাদ দেওয়া হয়েছে।

- With Agency Inputs

NCERT-এর ডিরেক্টর দীনেশ প্রসাদ সাকলানি
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা আইন বাতিল করার দাবিতে নয়া সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে ১৪টি সংগঠন
NCERT-এর ডিরেক্টর দীনেশ প্রসাদ সাকলানি
Prashant Kishor: ‘ক্ষমতা টেকাতে মোদির পা ছুঁয়ে বিহারকে লজ্জিত করেছেন’ – নীতিশকে খোঁচা পিকের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in