বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা এবং তার জেরে মনিষীদের মূর্তি ভাঙা ও ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বুধবার এক ফেসবুক পোষ্টে তসলিমা প্রশ্ন তোলেন – ‘মবোক্রেসি থেকে ডেমোক্রেসি কি আদৌ আসবে?’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলন এবং তার জেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্তফা এবং দেশত্যাগের পর সোমবার বিকেল থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙা। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বহু স্মারক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগানো হয় বিভিন্ন সৌধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত বেশ কিছু ভিডিওতে সাধারণ মানুষকে লুটপাট করে জিনিসপত্র নিয়ে যেতেও দেখা যায়। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার। এর সঙ্গেই বিভিন্ন জায়গায় রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
বুধবার এরকমই একটি ছবি পোষ্ট করে তসলিমা লেখেন, “যে মবকে পুলিশ বা আর্মি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সেই মবকে নিয়ন্ত্রণ কে করবে? যে ''জাগ্রত ছাত্র জনতা'' রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে মানুষকে মুগ্ধ করেছিল, সেই জাগ্রত ছাত্র জনতা রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য ভেঙ্গে গুঁড়ো করেছে। তাহলে ওই গান ছিল লোক দেখানো? ছিল 'ভুয়া'?”
ওই পোস্টেই তিনি আরও লেখেন, “সেই ছাত্ররা কি তাদের স্কুলে আর ফেরত যেতে পারবে যে ছাত্ররা হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে? পাবলিক প্রপার্টি পুড়িয়ে দিয়েছে? মানুষের ঘর বাড়ি লুট করেছে? আমার মনে হয় না। খুনের নেশা কিন্তু মারাত্মক। নতুন সরকার অপছন্দের কাজ করলে নতুন সরকারকেও খুন করতে যাবে তারা। তবে উন্মত্ত অশান্ত অনেকেই তাদের মাদ্রাসায় ফেরত গিয়ে শিক্ষক দ্বারা বলাৎকারের শিকার হয়ে তবেই শান্ত হবে। আর্মি আর পুলিশ যেটা পারেনি, সেটা মাদ্রাসার শিক্ষকেরা পারবে।”
এই পোস্টেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মবোক্রেসি থেকে ডেমোক্রেসি কি আদৌ আসবে? সেটা ডেমোক্রেসি নয় কিন্তু, যদি মবোক্রেসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনও একটা রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন থেকে গায়ের জোরে বাদ দিতে হয়।”
এদিনই তিনি অন্য এক পোষ্টে লেখেন, "হাসিনার যুগেও মানুষকে ভয়ে মুখ বন্ধ রাখতে হতো। হাসিনা পরবর্তী যুগেও মানুষকে ভয়ে মুখ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছু আগেও ছিল না, পরেও থাকবে না।"
এদিন অন্য এক পোষ্টে সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তসলিমা জানিয়েছেন, "রাহুল আনন্দের বাসভবন, তাঁর সমস্ত বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দিয়েছে জামাত শিবিরের ''জাগ্রত'' জনতা। রাহুল আনন্দ প্রচুর বাদ্যযন্ত্র আবিস্কার করে ছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যখন বাংলাদেশে যান, মনে আছে তিনি আর কোথাও যাননি কিছু দেখতে, রাহুল আনন্দের বাড়ি গিয়েছিলেন তাঁর বাদ্যযন্ত্রগুলো দেখতে। সেই অত্যাশ্চর্য প্রতিভা রাহুল আনন্দকে দেশান্তরি হতে হয়েছে, নিশ্চয়ই তিনি আর পোড়া দেশে ফিরবেন না। তাঁর স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন