১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে বিগত ৪ দিন ধরে উত্তপ্ত ফ্রান্স। রাজধানী প্যারিসের পাশাপাশি রেনে, লিলে, লিয়ন, মার্সেই শহরগুলিও বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, টানা চাররাত ধরে চলা বিক্ষোভ-প্রতিবাদে শুক্রবার সারা রাতে দেশ জুড়ে প্রায় ৪৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আগের রাতে যেখানে প্রায় ৯১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে দেশের বেশ কয়েকটি শহর থেকে দাঙ্গারও খবর উঠে আসছে ফরাসি সংবাদমাধ্যমে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। পুলিশের গুলিতে মারা যায় ১৭ নছর বয়সী নাবালক নাহেল এম। পুলিশের দাবি, ট্রাফিক সিগনালে ওই কিশোরকে বারবার থামতে বলা হয়। তারপরও সে না থেমে সিগন্যাল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করে। বারংবার বলা সত্ত্বেও পুলিশি নির্দেশ না মানার জন্য তাঁকে শেষ মুহূর্তে গুলি করা হয়। এই ঘটনার পড়েই গোটা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শহরের রাজপথে নেমে এসে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখায়। জায়গায় জায়গায় অসংখ্য বাস, গাড়ি জ্বালিয়ে, টায়ার পুড়িয়ে, ভাঙচুর করে, বিশাল বিশাল সমাবেশ করে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় বিক্ষোভকারীরা। প্যারিসের বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন লক্ষ্য করে হামলাও চালানো হয়। এমনকি উত্তর ফ্রান্সের শহর লিলে শহরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষও হয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিষয়টিকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন। মানুষের তীব্র হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখে পুলিশ ইউনিয়নের তরফ থেকেও এই ঘটনার সমালোচনা করে এক অফিসারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের দাবি, তিনি গুলি চালিয়েছিলেন কারণ তাঁর মনে হয়েছিল যে তিনি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। আপাতত ওই অফিসারকে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে বিবিসি রিপোর্টে জানা গিয়েছে। তবে দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ‘নির্দোষ’ বলেই ধরে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ ইউনিয়ন।
তবে এই মুহূর্তে রাজধানী প্যারিসের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন। যদিও লিয়ন ও মার্সেই শহর এখনও অনেকটাই অশান্ত। টুইটারে তিনি আরও জানিয়েছেন, “লিয়ন ও মার্সেই শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষোভ ও লুঠপাটের অভিযোগ আসছে। স্থানীয় মেয়রদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে সেখানে আরও পুলিশ বাহিনী পাঠানো হবে।” ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৫ হাজার পুলিশ, স্পেশ্যাল ইউনিট, সশস্ত্র গাড়ি ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন