ভয়ানক দাবানলে মাত্র দুদিনেই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউই দ্বীপ। পুড়ে ছাই হয়ে গেল ঐতিহাসিক লাহানিয়া সেতু। ২৭০-এরও বেশি বাড়ি ও সরকারি ভবন মুহূর্তে পরিণত হয়েছে ধূসর ছাইয়ে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত এই আকস্মিক দাবানলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কমপক্ষে ৫৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিখোঁজের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘটনাকে ‘গুরুতর বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
হাওয়াই প্রশাসনের মতে, হাওয়াইয়ে এবছরের গোটা গ্রীষ্মকাল ছিল বেশ শুষ্ক। তার উপরেই চলতি সপ্তাহের শুরুতে সেখানে একটি হ্যারিকেন ঝড় হয়। সেই ঝড় থেকেই গত মঙ্গলবার মাউইয়ের কাছে বনাঞ্চলে আগুন ধরে যায়। মঙ্গলবার মাঝরাতেই মারাত্মক ঝোড়ো হাওয়ায় গাছপালা ধ্বংস করতে করতে মাউইয়ের শহরাঞ্চলে ঢুকে পড়ে উন্মত্ত আগুনের লেলিহান শিখা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আগুন এত তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পরে যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় কয়েক ডজন দেহ। এমনকি আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে গাড়ি নিয়ে পালাতে গিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু যাবেন কোথায়? একসঙ্গে অসংখ্য মানুষ রাস্তায় নেমে আসার তৈরি হওয়া যানজটে আটকে পড়ে রাস্তাতেই গাড়ির মধ্যেই আগুনের গ্রাসে ঝলসে যায় দেহ।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস প্রকাশিত বিবৃতিতে এই ভয়ানক দাবানলকে ‘গুরুতর বিপর্যয়’-এর নাম দেওয়া হয়েছে। হাওয়াইয়ের গভর্নর জশ গ্রিন এই নিয়ে জানিয়েছেন, হাজারেরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি ভবন পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। ঐতিহাসিক লাহানিয়া সেতুও আগুনের রোষে ধূসর হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫৫ জন মারা গিয়েছেন তবে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। কারণ, এখনও উদ্ধারকাজ চলছে এবং এখনও বাড়ি-গাড়ির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দেহ। যারা আগুনের গ্রাস থেকে কোনও মতে রেহাই পেয়েছেন, তারা শিকার হয়েছেন জমাট বাঁধা বিষাক্ত ধোঁয়ার। সেই ধোঁয়ার মধ্যেই বাধ্য হয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস চালিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
গত মঙ্গলবার আগুন এতটাই দ্রুত ছড়িয়েছিল যে, বন্দরে নোঙর করা নৌকোগুলিও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে লাহানিয়ার একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপত্য। ১৮৭৩ সালে ভারত থেকে ওই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া একটি প্রাচীন বটগাছও ছাই হয়ে গিয়েছে। ১৯৬১ সালে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের বিগ আইল্যান্ডে ভয়ঙ্কর সুনামিতে মারা গিয়েছিলেন ৬১ জন। তারপরে এটাই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন