বেতন বৃদ্ধির দাবিতে লন্ডন (London) ও প্যারিসে (Paris) চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এর জেরে সমস্যায় পড়েছেন নিত্য যাত্রীরা। আর, দু'দিনের (১০ ও ১১ নভেম্বর) এই ধর্মঘটে প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে দুটি শহরই।
মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য। কিন্তু, মাইনে বাড়েনি। যার জেরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সে।
ইতিমধ্যেই, রেলওয়ে কর্মীরা দেশজুড়ে একদিনের জন্য ‘ওয়াক আউট’ করেছে। সেই রেশ না কাটতে বৃহস্পতিবার থেকে ধর্মঘটে নেমেছেন ব্রিটেনের রেল, বন্দর এবং সড়ক পরিবহন ক্ষেত্রে শ্রমিকরা। ফলে- আবার ধমকে গিয়েছে ব্রিটেনের যান চলাচলের গতি।
এর আগে সরকার এবং বেসরকারী পরিবহন ক্ষেত্রের মালিক পক্ষের সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়গুলির দফায় দফায় বৈঠক হয়। কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির জেরে, চরম সংকটে পড়েছেন ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ। আর, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাইমন হেগেল (Saimon Hegel) নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘বাজার আগুন। খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।’
বর্তমানে, ব্রিটেনে ট্রেন কোম্পানিগুলি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। তবে, এই কোম্পানিগুলির কাজে ব্রিটেনের রক্ষণশীল সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করেছে রেল ইউনিয়নগুলি। তাঁরা জানিয়েছে, এই প্রভাবের জেরে বঞ্চিত হচ্ছে রেল কর্মীরা।
এদিকে, নিকো হগ (৩৬) নামে এক লন্ডনের নাগরিক বলেছেন, 'এই ধর্মঘট আমাকে খুবই প্রভাবিত করেছে (সমস্যায় ফেলেছে)। আমি সাধারণত গাড়ী এবং ট্রেনে যাতায়াত করি। কিন্তু, এখন আমাকে সাইকেল চালাতে হচ্ছে।'
অন্যদিকে, প্যারিসে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে যোগ দেন সাবওয়ে কর্মীরা। ধর্মঘটের জেরে ব্যাহত হয় মেট্রো পরিষেবা।
এছাড়া, ফ্রান্স জুড়ে ধর্মঘট করেন ট্রেন চালক, শিক্ষক সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শ্রমিক-কর্মচারীরা। শ্রমিক ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে চড়া মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে বেতন বাড়ানোর দাবি জানান হয়েছে।
ধর্মঘট নিয়ে আগে থেকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে প্রচার চালান হয়। এর ফলে বহু মানুষই সাইকেল, বাইক অথবা হেটে অফিসে যান। পাশাপাশি, ধর্মঘটের কারণে একাধিক দপ্তর থেকে কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ (Work from Home) করার ও সুযোগ দেওয়া হয়। বাস্তবে যা কোভিড মহামারীর আবহে চলা লকডাউনের স্মৃতিকেই উস্কে দিয়েছে।
জানা যাচ্ছে, শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে- ধর্মঘটের সমর্থনে রাজধানী প্যারিস সহ বিভিন্ন শহরে মিছিল হয়েছে। দেশের কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন সিজিটি (CGT) মেহনতীদের একজোট হয়ে ধর্মঘটে সামিল হওয়ার আহ্বান জানায়।
বৃহস্পতিবার, ভোর থেকেই প্যারিসের সব কটি মেট্রো শাখা বন্ধ জানায় পরিবহন সংস্থা আরএটিপি (RATP)। সংস্থার পক্ষ থেকে যাত্রীদের সফর বাতিল করতে জানান হয়।
আরএটিপি'র কর্মী থেরেসা সিলভেন (৩৬) জানান, 'সংস্থার ৭০ হাজারের বেশি কর্মী মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেহাল অবস্থায় দিনযাপন করছেন। অনেককেই সংসার চালাতে ধার দেনা করতে হচ্ছে। আটকে যাচ্ছে শিশুদের লেখাপড়ার খরচ। কিন্তু সরকার বিষয়টি নিয়ে উদাসীন। উল্টে তাঁদের দিয়ে বেশি লোকের কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নতুন লোক নেওয়া হচ্ছে না। ঠিক সময়ে দেওয়া হচ্ছে না বেতন। এর ফলে অনেক কর্মীই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।'
মিশেল ভলতেয়ার (৪৬) নামে এক রেল শ্রমিক বলেন, 'সরকার আমাদের কথা ভাবছে না। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নতুন পেনশন বিল আনতে চলেছেন। যাতে কর্মীদের আরো বেশি সময় কাজের পরে অবসর দেওয়া হবে। এমনটা চলতে পারে না। তারই প্রতিবাদে ধর্মঘট চলছে।'
এদিকে জানা যাচ্ছে, আরএটিপি (RATP)-র মাথায় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সকে বসাতে চলেছে ম্যাক্রোঁ সরকার। ইতিমধ্যে সংসদীয় কিমিটি বিষয়টিতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতির খুব একটা বদল হবে না বলে মনে করছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন