মৃত্যুর ৭৭ বছর পর নিলাম উঠলো নাৎসি স্বৈরশাসক হিটলারের ব্যবহৃত ঘড়ি। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নিলামে স্বৈরশাসকের সেই ঘড়ি বিক্রি হয়েছে ১.১ মিলিয়ন ডলারে। বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুসারে, জার্মান ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা হুবারের তৈরি এই হাতঘড়িতে স্বস্তিকা এবং হিটলারের নামের আদ্যক্ষর AH খোদাই করা আছে। এই নিলাম নিয়ে একাধিক ইহুদি নেতা আপত্তি জানান।
মেরিল্যান্ডের আলেকজান্ডার হিস্টোরিকাল অকশনে এক বেনামী দরদাতার কাছে এই ঘড়ি বিক্রি করা হয়েছে। নিলাম সংস্থা জানিয়েছে, এই ঘড়িটি হিটলারকে সম্ভবত দেওয়া হয়েছিল ১৯৩৩ সালের ২০ এপ্রিল। তাঁর ৪৪ তম জন্মদিন জার্মানির চ্যান্সেলর হবার সময় তাঁকে এই ঘড়ি উপহার দেওয়া হয়। এই নীলাম সংস্থা বিভিন্ন ঐতিহাসিক অটোগ্রাফ, নথিপত্র এবং ফটোগ্রাফ, মিলিটারি এবং গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংসাবশেষ নিয়ে কাজ করে।
নিলামকারী সংস্থা তাদের ক্যাটালগে জানিয়েছে, "ঘড়িটি এবং তার ইতিহাস বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সম্মানিত ঘড়ি নির্মাতা এবং সামরিক ইতিহাসবিদদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে। এঁদের সকলেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এটি আসল এবং প্রকৃতপক্ষে অ্যাডলফ হিটলারের।"
সংস্থা আরও জানিয়েছে, ঘড়িটি যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে নেওয়া হয়। ১৯৪৫-এর ৪ মে, প্রায় ৩০ জন ফরাসি সৈন্যের একটি দল বার্গোফে হিটলারকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করেছিল। ওই দলের সদস্যদের মধ্যে সার্জেন্ট রবার্ট মিগনোট ঘড়িটি নিয়ে ফ্রান্সে ফিরে আসেন। নিলাম সংস্থা জানিয়েছে, টাইমপিসটি মিগনোট তাঁর এক আত্মীয়ের কাছে পুনরায় বিক্রি করে। ঘড়িটি মিগনোট পরিবারের একচেটিয়া দখলে ছিল এবং এর আগে কখনও বিক্রির জন্য দেওয়া হয়নি।
যদিও এই বিক্রির প্রতিবাদ জানিয়েছেন কিছু ইহুদি নেতা। ৩৪ জন ইহুদি নেতার স্বাক্ষরিত এক খোলা চিঠি এই বিক্রিকে "ঘৃণ্য" বলে বর্ণনা করেছে এবং নাৎসিদের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সামগ্রী নিলাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই নিলামে হিটলারের স্ত্রী ইভা ব্রাউনের একটি পোশাক, নাৎসি কর্মকর্তাদের অটোগ্রাফ করা ছবি এবং একটি হলুদ কাপড় যেখানে স্টার অফ ডেভিড শব্দটি "জুড" সহ লিখিত আছে। যা জার্মান ভাষায় ইহুদিদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
ইউরোপীয় ইহুদি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রাব্বি মেনাচেম মার্গোলিন জানিয়েছেন, এই লেনদেনের বিরোধিতা করেছেন।
নিলামের আগে জার্মান মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময়, আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রীমতী মিন্ডি গ্রিনস্টেইন জানিয়েছেন, এই নিলামের লক্ষ্য ছিল ইতিহাস সংরক্ষণ করা এবং বেশিরভাগ বিক্রি হওয়া সামগ্রী ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখা হয় বা হলোকাস্ট জাদুঘরে দান করা হয়।
সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক ওই সাক্ষাতকারে তিনি আরও জানান, "ইতিহাস ভালো হোক বা খারাপ হোক, তাকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।" "ইতিহাস ধ্বংস করে দিলে ঘটনা যে ঘটেছিল তার আর কোনও প্রমাণ থাকেনা"।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন