মেয়েদের শিক্ষায় একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। এর আগে মেয়েদের কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সে দেশের প্রশাসন। এবার মহিলা স্কলারদের দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করতেও বাধা দিল তারা।
সম্প্রতি দুবাইয়ের এক ধনকুবেরের উদ্যোগে কয়েকজন আফগান মেয়ে আরব আমিরশাহিতে গিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। কিন্তু এতে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াল তালিবান সরকার। দেশ ছাড়ার কয়েক মুহূর্ত আগে কাবুলের বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া ওই আফগান স্কলার ছাত্রীদের।
সম্প্রতি দুবাইয়ের এক ধনকুবের, খালাফ আহমেদ আল হাবতুর প্রায় ১০০ জন মেধাবী আফগান মেয়েকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে রেখে পড়াশোনার সমস্ত খরচ স্কলারশিপ বাবদ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। গত সপ্তাহে সেই স্কলারশিপ প্রাপ্ত বেশ কয়েকজন আফগান ছাত্রী কাবুল থেকে বিমানে করে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য কাবুল বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। কিন্তু বিমান উড়ানের নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মুহূর্ত আগেই আটকে দেওয়া হয় ওই ছাত্রীদের।
এই নিয়ে দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠিত ‘আল হাবতুর গ্রুপ’-এর অধিকর্তা এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “স্কলারশিপ প্রাপ্ত ছাত্রীদের একেবারে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ায় আমরা বিস্মিত। কারণ, আমরা অনেক কষ্ট করে সব কিছু আয়োজন করেছিলাম। দুবাইয়ের স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিদেশমন্ত্রক, অভিবাসন দফতরের সাহায্য ও একান্ত প্রচেষ্টায় আমরা সবরকম প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেয়েছিলাম। পুরো প্রক্রিয়াটা বাধাহীনভাবে সম্পন্ন করার জন্য সমস্ত দফতর একসঙ্গে কাজ করেছে, সবকিছু তৈরি হয়ে গিয়েছিল।”
কাবুলের বিমানবন্দরে বাধাপ্রাপ্ত এক ছাত্রীর অডিও বার্তাও তিনি টুইটারে (বর্তমানে X) পোস্ট করেছেন। সেই অডিও বার্তায় ওই ছাত্রীকে একজন পুরুষ সহচর রাখার জন্য জোর করা হয়েছে বলে বলতে শোনা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার একটি আইন পাশ করে। সেই আইন অনুযায়ী, ৭৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে বা দেশের বাইরে ভ্রমণ করার সময় আফগান মহিলাদের সঙ্গে একজন করে পুরুষ অভিভাবক (স্বামী বা নিকট আত্মীয়) রাখা বাধ্যতামূলক।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা তাঁদের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেই দেশের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয় তালিবান গোষ্ঠী। তারপর থেকেই মহিলা-শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সময় তাঁরা বিভিন্ন ফরমান জারি করেছে। গত বছরই আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষায় এই চূড়ান্ত বাধানিষেধের তীব্র নিন্দা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু তাতে সে দেশের তালিবান প্রশাসনের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন