Afghanistan: তালিবানি শাসনে বাড়ছে দারিদ্র্য, সন্তানদের বাঁচাতে বেকারিতে রুটি ভিক্ষায় অসহায় মহিলারা

আফগানিস্তানে তালিবানি দখলদারির পর দারিদ্র্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজধানী কাবুলের বেকারির সামনে প্রতিদিন দলে দলে মহিলা রুটির জন্য ভিক্ষা করতে এবং তাদের সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।
বেকারির সামনে রুটি ভিক্ষায় লাইন
বেকারির সামনে রুটি ভিক্ষায় লাইন ছবি মিরাকা পোপালের ট্যুইটার হ্যান্ডেলের সৌজন্যে
Published on

আফগানিস্তানে তালিবানি দখলদারির পর, দারিদ্র্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাজধানী কাবুলের বেকারির সামনে প্রতিদিন দলে দলে মহিলা রুটির জন্য ভিক্ষা করতে এবং তাদের সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এ খবর জানিয়েছে পাজওক নিউজ।

কাবুলের চারাহি কাম্বার এলাকার বাসিন্দা সেপনা-র স্বামী মারা গেছেন। যিনি তাঁর ছয় সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিদিন ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি জানিয়“ছেন, "আমি প্রতিদিন ভিক্ষা করি, কিন্তু প্রায় কেউই আমাকে টাকা দেয় না। আমি তাই সন্ধ্যা পর্যন্ত বেকারির সামনে বসে থাকি। যদি কেউ আমাকে কিছু রুটি দান করে। কারণ আমার বাচ্চারা না খেয়ে থাকে। আমাকে বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হচ্ছে।"

তিনি বলেন, "আমার স্বামী একজন পুলিশ কর্মী ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। আমি একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ করতাম। যিনি আগের সরকারের পতনের পর আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে গেছেন।"

সন্তানদের বাঁচাতে বেকারির সামনে একা সেপনাই দাঁড়িয়ে থাকেন এমনটা নয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহু মহিলাই তাঁর পাশে বসে আছেন। কেউ রুটি কিনে যদি তাঁদের দেয়, তার জন্য অপেক্ষা করছেন।

কাবুলের কোটা-ই-সাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা বানাফশাহ, কালো চাদর গায়ে মুখ ঢেকে কাবুলের দ্বিতীয় পুলিশ জেলার একটি বেকারির সামনে বসে অন্যান্য মহিলাদের সাথে তার বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য কিছু রুটি চাইছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, "আমি এখানে ৫ টার আগে আসি এবং ৭ টা পর্যন্ত এখানে থাকি। যতক্ষণ না আমি ১০ রুটি পাই ততক্ষণ অপেক্ষা করি, তারপর বাড়ি যাই।"

বানাফশা, যিনি তার দশ জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, তিনি বলেছেন তার স্বামী প্রতিবন্ধী এবং কাজ করতে অক্ষম। তিনি বলেন, "আমার বাচ্চারা দিন দিন অভুক্ত থাকছে। কারণ কেউ গরীবকে দান করে না। আগের সরকারের সময় এরকম ছিলো না। মানুষ ভালো থাকত। কিন্তু এখন মানুষ খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি, তাই আমি বেকারির সামনে এসে ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছি।"

কাবুল শহরের দহন-ই-বাগ এলাকার একটি বেকারির মালিক সুহরাব বলেন, "আশরাফ গনি সরকারের পতনের আগে, প্রতিদিন কিছু ভিক্ষুক আসত। কিন্তু এখন যে কোনো বেকারির সামনে গেলেই অনেক বড়ো লাইন দেখা যাবে।"

তিনি আরও জানান, "আমরা দিনে তিনবার রুটি তৈরি করি এবং আমরা অবশ্যই তাদের তিনবেলায় একবার সাহায্য করতে পারবো। আরও কিছু ভালো মানুষ আছেন, যারা এঁদের রুটি দান করেন।"

কাবুলের পারওয়ান-ই-দোম এলাকার একজন বেকারি মালিক সোবহানাল্লাহ আরও বলেছেন, প্রতিদিন কয়েক ডজন মহিলা কিছু রুটির আশায় তাদের বেকারির সামনে লাইনে দাঁড়ান।

তিনি জানিয়েছেন, "আমাদের বেকারিতে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন মহিলা কিছু রুটি পেতে লাইনে বসেন।" "আমরা তাদের প্রত্যেককে কিছু রুটি দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা। কিন্তু আমরা সামান্যই করতে পারি। এই মহিলাদের বেশিরভাগই ভিক্ষুক নন, এঁরা দরিদ্র এবং বিধবা।"

বর্তমান পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন: "আফগানিস্তানের পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এখন কিছু মানুষ হয়তো শুধুমাত্র নিজেদের খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট উপার্জন করতে পারছেন। আগের সরকারে দারিদ্র্য ছিল। তখনও কম সংখ্যায় মহিলারা এখানে আসতেন। কিন্তু এখন ক্রমশ তা গুরুতর আকার ধারণ করছে।"

বেকারির সামনে রুটি ভিক্ষায় লাইন
Afghanistan: নভেম্বর মাস থেকেই চরম খাদ্য সংকটে পড়তে চলেছেন ২২.৮ মিলিয়ন মানুষ - রিপোর্ট

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in