আফগানিস্তান জুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর তালিবানিদের হামলা চলছে। গত চার সপ্তাহে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই ধরণের ঘটনার খবর এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের অস্ত্র, লাঠি, চাবুক দিয়ে মারা হচ্ছে। শুক্রবার এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগের হাইকমিশনারের মুখপাত্র রবিনা শামাদাসানি।
গতকাল রবিনা শামাদাসানি বলেন, তালিবানিদের পক্ষ থেকে বিনা অনুমতিতে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই ঘটনার ঠিক একদিন আগে দেশের টেলিকম কোম্পানীগুলোকে তালিবানিদের পক্ষ থেকে কাবুলের বিভিন্ন অংশে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শামাদাসানি আরও জানিয়েছেন, আফগান মহিলা এবং পুরুষরা রাস্তায় বেরোতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তালিবানিরা সাধারণ কোনো কথাই শুনতে চাইছে না।
তিনি বলেন, আমরা তালিবানিদের জানিয়েছি, সাধারণ মানুষের ওপর বাহিনীর ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা হোক এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে যারা আটক হয়েছেন ও যেসব সাংবাদিক এইসব বিক্ষোভের করতে গিয়ে আটক হয়েছেন তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হোক।
গত ১৫ থেকে ১৯ আগস্ট নানগরহর এবং কুনার প্রদেশের স্থানীয় অধিবাসীরা দেশের জাতীয় পতাকা তুলে প্রতিবাদ জানান। এই সময় তালিবানিদের পক্ষ থেকে এক বালক ও এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এছাড়াও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর গুলি চালনার ঘটনায় আট জন আহত হয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর হীরাটে এক প্রতিবাদ জমায়েতের ওপর গুলি চালায় তালিবানিরা এবং দু’জনকে হত্যা করে। এই ঘটনায় সাত জনের আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। একইদিনে কাবুলে এক বিক্ষোভ সভায় আক্রমণ করে এবং মহিলা সহ একাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়।
এই সপ্তাহের বুধবার কাবুলের দাস্তি-বারচি এলাকায় বড়ো সংখ্যায় মহিলারা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখান। এই জমায়েত স্থল থেকে পাঁচজন সাংবাদিককে উঠিয়ে নিয়ে যায় তালিবানিরা এবং দুই সাংবাদিকের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালায়।
রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, বাদাখাশান প্রদেশের ফৈজাবাদে মহিলাদের এক বিক্ষোভ সমাবেশে গুলি চালায় তালিবানিরা। এই জমায়েতে মহিলারা ছাড়াও সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তালিবানিদের গুলি চালনায় কমপক্ষে সাত জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
শামাদাসানি মনে করিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোনোরকম আক্রমণ করা যায়না। সাংবাদিকদের এই বিক্ষোভের সময় আটক করা বা তাঁদের নিগ্রহ করা যায় না। এমনকি ওই জমায়েত যদি বিনা অনুমতিতে হয়, তাহলেও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করা যায়না।
তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, "তালিবানিদের উচিত শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। যেখান থেকে জনগণ তাদের উদ্বেগের কথা বলার এবং জনসাধারণের বিষয়ে তাদের মতপ্রকাশের অধিকার বজায় রাখতে পারে।"
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন