ইউক্রেনে ন্যাশনাল গার্ড একটি ছবি পোস্ট করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, অ্যাজভ বাহিনী তাদের বুলেটে শূকরের চর্বি মেশাচ্ছে। চেচনিয়া বাহিনী রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনে ঢুকেছে এবং তারা মুসলিম বলে এই তৎপরতা বলে খবর। একইসঙ্গে ইউক্রেন সীমান্তে ভারতীয়, আফ্রিকানদের উপর হামলা চালানোর পিছনেও এই অ্যাজভ বাহিনীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ। অ্যাজভ বাহিনীকে স্বেচ্ছাসেবক বলে পশ্চিম ইউরোপের সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হলেও তারা আসলে ইউক্রেনের সরকারি সেনাবাহিনীর অংশ।
কারা এই অ্যাজভ? নয়া নাৎসি ও শ্বেত আধিপত্যের মতাদর্শে গড়ে ওঠা উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠনের থেকে এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। দুই জাতিবিদ্বেষী সংগঠন প্যাট্রিয়ট অফ ইউক্রেন এবং সোশ্যাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মধ্য থেকে অ্যাজভ গড়ে ওঠে। বহুদিন ধরে এই দুই সংগঠন অভিবাসী ও সংখ্যালঘু এবং রোমা সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছিল।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে উৎখাত করার জন্য যে বিক্ষোভ গড়ে ওঠে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েছিল এই সংগঠন। রাষ্ট্রপতি দেশ ছেড়ে পালানোর পরপরই কিয়েভ ও অন্যত্র রুশ ভাষাভাষীদের উপর যে হিংসাত্মক হামলা হয়, তাতে তারা যুক্ত ছিল। সেই অভ্যুত্থানের পর পরই পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতা দাবি ওঠে। সেখানে লড়াই করতে যায় এই দুই সংগঠনের মিলিশিয়া।
২০১৪ সালের নভেম্বরে এই সংগঠনের মিলিত বাহিনীকে সরাসরি দেশের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা নাৎসি জেনেও সেই সময়কার রাষ্ট্রপতি পেট্রো পোরোশেঙ্কো বলেছিলেন, এরাই আমাদের সেরা যোদ্ধা, সেরা স্বেচ্ছাসেবক। এই দুই সংগঠনের নেতা ছিলেন আন্দ্রেই বিলেতস্কি। ইউক্রেনই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যাদের সেনাবাহিনীতে ঘোষিত নাৎসিরা আছে। ২০১৬ তে রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে অ্যাজভ বাহিনীকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। ডোনেৎস্কে গণহত্যা ও ধর্ষণের অভিযান চালানোর জন্য তাদের চিহ্নিত করা হয়।
খারকিভের প্রাক্তন গভর্নর এবং এখন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রী আর্সেন আবাকভের সঙ্গে অ্যাজভের সম্পর্ক প্রথম থেকেই ঘনিষ্ঠ। পূর্ব ইউক্রেনের দুই অঞ্চল ডোনেৎস্ক ও লুহানস্কতে গত ছয় বছর ধরে আক্রমণ চালানোর পিছনে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে এই অ্যাজভ। ১৪ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন গত কয়েক বছরে। প্রসঙ্গত, সামরিক অভিযান চালানোর আগে এই দুই অঞ্চলকে রাশিয়া স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে। অ্যাজভকে বিপদজনক সংগঠন বলে চিহ্নিত করেছিল ফেসবুক।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর দিনেই ফেসবুকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, ফেসবুকে অ্যাজভের প্রশংসা করা যাবে। ইউক্রেন সরকারের মদতে গোটা ইউরোপে নয়া নাৎসিদের সামরিক পরিকাঠামো হয়ে উঠেছে। অ্যাজভের ওয়েবসাইটে বিশেষ করে অ-শ্বেতাঙ্গদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ প্রয়োগ করা হয়। সরকার ও সেনাবাহিনীতে অ্যাজভের সংখ্যা বেড়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন