আদালতের আদেশে কারাগারে পাঠানোর ৪ দিন পর জামিনে মুক্তি পেলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দ্রব্যমূল্য নিয়ে করা এক সংবাদের শিরোনাম এবং ছবির মধ্যে অসঙ্গতির জেরে আটক সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস। অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন। তিনি দেশটির বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় কর্মরত আছেন।
সোমবার (৩ এপ্রিল) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দ্বিতীয়বার জামিন আবেদন করেন শামসুজ্জামান। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন। এই দিন বাংলাদেশের সময় সন্ধ্যা ছয়টার পর কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। কারা ফটকেই তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৮ মার্চ শেষ রাতে ঢাকার সাভারে নিজ বাসা থেকে শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ২৯ মার্চ তাঁকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ৩০ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তোলা হলে ঢাকার রমনা থানার পুলিশ তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। সাংবাদিক শামসুজ্জামানের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আজ কারামুক্তির পর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা শামসুজ্জামানের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চান। শামসুজ্জামান বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমি একটু বিধ্বস্ত ছিলাম, মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত ছিলাম। আমার মনে হয় যে সে জায়গা থেকে আমি বের হয়ে এসেছি। এখন তো ভালো লাগছে সব মিলিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অফিস থেকে শুরু করে দেশের সাংবাদিক সমাজ আমার সঙ্গে সব সময় ছিলেন। এটা আমার জন্য আনন্দের বিষয়। এটা আমাকে সব সময় আনন্দ জুগিয়েছে এবং শক্তি জুগিয়েছে। তাঁরা সবাই সত্যের পাশে ছিলেন। আমার ভয়েসটি বাইরে থেকে আমি পেয়েছি, মানুষের মুখ থেকে পেয়েছি। আমার কিছু বলার প্রয়োজন হয়নি।’
সাংবাদিকেরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে শামসুজ্জামানের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। এর জবাবে শামসুজ্জামান বলেন, ‘এ নিয়ে আমি নানা আলোচনা দেখছি। আমি ছোট একটা মানুষ। সবাই বলছে, এটাকে স্থগিত করা দরকার। সম্মিলিত সবার মতামত নিয়ে এটাকে সুন্দরভাবে করা দরকার। বর্তমানে এটাকে স্থগিত করা উচিত। যাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন, অভিজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সুন্দরভাবে এটা করা উচিত, যাতে সবাই একে গ্রহণ করতে পারেন।’
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিসবে প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘ফটোকার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার পর অসংগতি নজরে আসে এবং দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়।
পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে তা প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর; বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
এ ঘটনার জেরে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, থানায় নথিভুক্ত হওয়া এজাহার অনুযায়ী মামলাটি হয়েছে। বাদীর পরিচয় লেখা হয়েছে, তিনি ঢাকার কল্যাণপুরের বাসিন্দা। তাঁর ফেসবুক পেজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন