বাংলাদেশে সরকার পতনের এক দফা দাবির আন্দোলনে শনিবার দিনভর উত্তাল রইল রাজধানী ঢাকা। দিনভরের এই সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে ও অন্তত ৫০ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে পুলিশের সাথে সহিংসতায় বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) যুব সংগঠনের এক কর্মীর নিহত হয়েছে বলে গেছে। এছাড়াও দলটির দাবি তাদের অনন্ত কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
দেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে পুলিশ হাসপাতালেও।
বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিবার্চনের দাবিতে ২৮ অক্টোবর শনিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় সমাবেত হয়।
এদিন সকাল থেকেই ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশেপাশের এলাকায় সমাবেত হতে থাকে দলের নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সাথেসাথে নেতাকর্মীদের ভীড়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনড ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পুলিশ বাহিনী। এসময় পুরো এলাকা কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এক পর্যায়ের পুলিশের মারমুখী অবস্থানের কারণে দ্রুত সমাবেশে শেষ করে দেয় বিএনপি।
এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্য নিহত ও অনন্ত অর্ধশত পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের রেশ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বিভিন্ন অংশে। বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকার বিজয়নগর, কাঁকড়াইল, নয়াপল্টন এলাকাসহ আরো বেশ কিছু জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
সমাবেশ স্থল থেকেই ২৯ অক্টোবর (রবিবার) সারাদেশ ব্যাপী হরতালের ঘোষণা দেয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপরই তিনি মঞ্চ থেকে সরে যান। পুলিশের জাল কামান, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটের কারণে পুরো সমাবেশস্থল ফাঁকা হয়ে যায়।
বিএনপির সাথে জোটে বা আন্দোলনে না থাকলেও সরকার পতনের দাবিতে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলটির পক্ষ থেকে ঢাকায় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশ করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাইলেও পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তবে শাপলা চত্বরেই সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় ছিল দলটি। সকাল থেকেই শাপলা চত্বরের আশেপাশে সমাবেত হতে থাকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশ ও RAB-এর কড়া অবস্থানের কারণে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে না পেরে তার পাশেই আরামবাগ এলাকায় বিনা অনুমতিতেই সমাবেশ করেছে জামায়াত।
বেশ কয়েকবার পুলিশের সাথে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই সমাবেশ শেষ করে তারা। সমাবেশ শেষে তারাও রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এদিন বিরোধী দলগুলোর সরকার পতনের আন্দোলন মোকাবিলায় মাঠে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশ করা হয় ঢাকায় বাইতুল মোকারমের দক্ষিণ গেটের পাশে।
আওয়ামী লীগের সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা হাতে করে বাঁশের লাঠি, লোহার রড, পাইপ নিয়ে আসে। ঢাকায় পুরাতন পল্টন, বিজয় নগর ও কাঁকড়াইলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে তারাও সংঘর্ষে জড়ায়। বিএনপির ডাকা হরতাল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিরোধীদের আন্দোলন থেকে যে কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে আছে। গত ২৭ অক্টোবর থেকেই রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথগুলোসহ বিভিন্ন পয়েন্ট চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীবাহী পরিবহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও RAB সদস্যরা।
এদিকে দিনভর ব্যাপক সহিংসতার জেরে নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকায় ১০ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন