বাংলাদেশে সরকারের ইস্তফার দাবিতে এবার সারাদেশে টানা তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিরোধী দলগুলো। ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে। এই অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে সড়ক, রেল ও নৌপথ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২৯ অক্টোবর হরতাল কর্মসূচির পর বিএনপিসহ তাদের আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলোর পক্ষ থেকে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। এদিকে ৩০ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়।
গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী সরকারের ইস্তফার এক দফা দাবিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), দলটির আন্দোলনের শকির বিভিন্ন দল ও জোট। এছাড়াও এদিন একই দাবিতে মাঠে ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকেই গত ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা করে বিএনপিসহ তার আন্দোলনের শরিক বিভিন্ন দল ও রাজনৈতিক জোটগুলো। বিএনপির সাথে কোনো ধরনের জোটে না থাকলেও একই দাবিতে বিএনপির কর্মসূচির সাথে মিলিয়েই মাঠে থাকছে জামায়াতে ইসলামীও। তারাও ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।
হরতাল কর্মসূচির দিনে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা তেমন একটা রাস্তায় না থাকলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো বলছে, জনগণ তাদের হরতাল কর্মসূচি স্বতস্ফূর্তভাবে পালন করেছে বলেই এই দিন সড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল।
এদিকে বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৬ মামলা:
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকা বিএনপির সমাবেশের দিনে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীদের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের ১ হাজার ৫৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবরের ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ২৮টি মামলা করা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর আরো আটটি মামলা করা হয়েছে। এই আটটি মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া কেন্দ্র থেকে এক আনুষ্ঠানিক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়।
এসব মামলায় ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিনে দেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। তাঁকে পুলিশ হত্যাসহ অন্তত চারটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও আসামির তালিকায় রয়েছেন - দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়ন নেতা মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়; সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আরো অনেকেই। মোট ৫৯ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
এই সব মামলায় পুলিশকে হত্যা ও হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বেশির ভাগের বাদী পুলিশের সদস্যরা। কয়েকটি মামলার বাদী হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।
ডিএমপি জানিয়েছে, ২১ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৯ দিনে ঢাকা মহানগর পুলিশের ৮টি অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা ও হিংসার ঘটনায় ১ হাজার ৭২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন ২৮ অক্টোবর, ৬৯৬ জনকে। মহাসমাবেশের আগের ২ দিনে ৫৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন গ্রেপ্তার করা হয় আরও ২৫৬ জনকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন