Bangladesh: বাংলাদেশে সরকারের ইস্তফার দাবিতে আজ আন্দোলনে বিরোধীরা; মোকাবিলায় ময়দানে ক্ষমতাসীন দল

আজই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৬টি দলও ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ করে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করবে। দলটির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

 আজ ১২ জুলাই (বুধবার) রাজাধানী ঢাকায় সমাবেশ করে সরকারের ইস্তফার দাবিতে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করবে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ঢাকার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছে দলটি।

একই দিনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৬টি দলও ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ করে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করবে। দলটির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। তবে ২০১৪ সালের পর এবারই তাদের সমন্বিতভাবে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে। এরই চূড়ান্ত পর্যায়ে এলো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সরকার পতন।

বিএনপি ও তাদের সমমনা দল ও জোটগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রবিবার (০৯ জুলাই) বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক যৌথসভায় দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ আমানও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

সাংগঠনিক বৈঠকে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে আমানউল্লাহ বলেছেন, ‘১২ জুলাইয়ের সমাবেশে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে আপনাদের আসতে হবে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। সেখান থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন পর্যায়ের আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন।’

বিএনপি ও তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্র জানায়, যুগপৎ কর্মসূচিতে আন্দোলনের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেওয়া হবে। কর্মসূচির মধ্যে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রা, লংমার্চ ও রোর্ডমার্চ এবং সব শেষে ঢাকামুখী ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি থাকবে। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির চিন্তাও দলের মধ্যে রয়েছে।

বছরজুড়েই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে নানা ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে তারুণ্যের সমাবেশ ও শ্রমজীবী মানুষের পদযাত্রার কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলোও পৃথক কর্মসূচি পালন করছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই দাবি আদায়ের ফয়সালা করতে চায় বিএনপি। আইন অনুযায়ী নির্বাচন করতে আগামী অক্টোবর মাসেই তপশিল ঘোষণা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই মোতাবেক সেপ্টেম্বর মাসেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়তে চায় দলটি। লক্ষ্য অর্জনে ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ৩১ দফা যৌথ রূপরেখা এবং এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপি। প্রতিটি কর্মসূচিতে জনগণকে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনে রূপ দিতে চায় তারা।

একই সঙ্গে ১৯৯১ সালের আদলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়াও প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বিএনপির নেতৃত্ব। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা আরও জোরদার করবে দলটি। আন্দোলন ও নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন নিশ্চিতেও কাজ করছে বিএনপি। পাশাপাশি সরকারের অবস্থানও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পাল্টা কৌশল গ্রহণ করবে তারা।

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে সমমনা কয়েকটি জোট ও দলের সঙ্গে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে গত ডিসেম্বর থেকে। অনেক দিন ধরে তাঁরা এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস বাকি। এই অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার তাগিদ থেকে এখন এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন তাঁরা।

আন্দোলন মোকাবেলায় মাঠে থাকবে শাসক দল:

এদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির এক দফা আন্দোলন মোকাবেলা করতে মাঠে থাকার ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

চলতি জুলাই মাসে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে চিন্তিত না হলেও রাজপথের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে যা যা করণীয়, সবই করবে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশের’ পাল্টা হিসেবে দেশের আট বিভাগীয় শহরে ছাত্র ও যুব সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

মূলত দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে এসব সমাবেশ করা হবে। এসব কর্মসূচিতে নিজ নিজ বিভাগের মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির ভূমিকা থাকবে। দিন-তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে চলতি মাস থেকেই সমাবেশগুলো শুরুর কথা রয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি যে এক দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলছে, তা মাথায় রেখেই এসব সমাবেশের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিএনপি যাতে এককভাবে রাজপথের দখল নিতে না পারে, সেটাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। এ জন্যই ছাত্র ও যুবসমাজের নামে তরুণদের রাজপথে নামানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বিএনপির চলমান কর্মসূচি দেখে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভিন্ন কর্মসূচিও নেওয়া হবে।

এদিকে বিএনপিসহ ৩২টি দলের সরকার পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক ঐক্যকে ‘জগাখিচুড়ি’ আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, বিএনপি ও সমমনাদের এক দফার আন্দোলনের পতন অনিবার্য। কারণ, যে লক্ষ্য নিয়ে তারা জগাখিচুড়ির ঐক্য করেছে, তাতে ফল আসবে অসহনীয়।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in