বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদ ও পাসপোর্টসহ সরকারি যে কোনো ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে বাবার নাম লেখার বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। এবার বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম ও আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে দেশটির হাইকোর্ট। অর্থাৎ এখন থেকে কেউ চাইলে শিক্ষা সনদ ও পাসপোর্টসহ সরকারি যে কোনো ফর্ম পূরণ করার সময়ে বাবার পরিচয় ব্যবহার না করে বা কারও বাবা না থাকলে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে বাবার পরিচয় ব্যবহার না করে মা কিংবা আইনগতভাবে বৈধ অভিভাবকের নাম লিখতে পারবেন।
আদালতে ২০০৯ সালে করা এক রিটের ভিত্তিতে গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের হাইকোর্ট এই রায় দেয়।
ঐতিহাসিক এই রায়ের পর আদালতে রিটকারী আইনজীবী আইনুননাহার সিদ্দিকা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রাজশাহী বোর্ডে এসএসসি ও এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য বাবার নাম না দেওয়ায় এক শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এ ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০০৯ সালে আমরা জনস্বার্থে একটি রিট করি। রায়ে আদালত বলেছে, বাবা অথবা মা কিংবা কোনো আইনগত অভিভাবক হিসেবে কারো নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে পারবে শিক্ষার্থী। এমনকি পাসপোর্টসহ সরকারি যে কোনো ফরম পূরণের ক্ষেত্রে এমনটি করা যাবে। সরকারকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।“
রিট থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে ঠাকুরগাঁও জেলার এক তরুণী সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারায় তাঁকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকার করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। পরে এই তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো হচ্ছে - বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং নারীপক্ষ।
আদালতের এই রায়ে বর্তমানে কোন কোন শিক্ষা বোর্ডে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা ও মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হয় তার একটি তালিকা এবং যেসব যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উল্লেখ করতে অপারগ তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সে সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন