বাংলাদেশ সরকারের ইস্তফার এক দফা দাবিতে আবারও অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করল প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপি-র পক্ষ থেকে আগামী ০৫ নভেম্বর থেকে ০৬ নভেম্বর টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও একই সময়ে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে বিএনপি আন্দোলন শরিক বিভিন্ন দল ও জোটগুলো।
বিএনপির সাথে কোনো জোটে না থাকলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও একই সময়ে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। সড়ক, নৌ, রেলপথ এই কর্মসূচির আওতায় থাকবে।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর থেকে ০২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও তাদের আন্দোলনের শরিক বিভিন্ন দল ও রাজনৈতিক জোটগুলো।
দেশব্যাপী বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন জেলায় সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল করলেও দেশব্যাপী দূরপাল্লার বাস বন্ধ ছিল। টানা অবরোধ কর্মসূচির সময়ে রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের গণপরিবহন চলাচল করেনি। ফলে দেশের এইসব অংশের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা কার্যত সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।
এদিকে বরাবরের মতোই বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচি মোকাবিলায় রাস্তায় নেমেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী দলগুলোর সহিংসতা থেকে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তারা রাস্তায় নেমেছে।
শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছে, যে কোনো মূল্যে বিরোধীদের ডাকা সরকারের ইস্তফার দাবির এই আন্দোলন প্রতিহত করা হবে। তাদের নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার কোনো সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। কে নির্বাচনে অংশ নেবে আর কে নেবে না এটা তাদের দেখার বিষয় নয়। কেউ নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করেত পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর থেকে ০২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দেবার ঘটনা ঘটে। তিনদিনে কর্মসূচিতে প্রায় ৩০টির মতো যানবাহনে অগ্নি সংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
গত ১ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২১টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেল।
এদিকে দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার পরও কীভাবে এতো সংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো সে নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর টানা অবরোধী কর্মসূচির মাঝেই দেশব্যাপী ব্যাপক ধক-পাকড় চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
গত ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। প্রথমে তাঁকে ঢাকার গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশের ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ। পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে সেখান থেকে তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
জামিন চেয়ে ০২ অক্টোবর আদালতে হাজির করা হয় তাকে। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে আবারও কারাগারে পাঠায়।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ দলটির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকেও গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আদালতে হাজির করা হলে দু’জনকেই ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকার আদালত।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের ৫৯ শীর্ষ নেতার নামে মামলা করেছে পুলিশ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন