বাংলাদেশে নজিরবিহীনভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব ধরনের জ্বালানি তেলে লিটার প্রতি ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ শতাংশ। লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। অকটেনের দাম বেড়েছে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ পেট্রল ও অকটেনের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। আজ শনিবার (৬ আগস্ট) থেকেই এই বাড়তি মূল্য কার্যকর হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (০৫ আগস্ট) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুতক্রবার রাত ১২টার পর থেকে ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, কেরোসিন প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, অকটেন প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা ও পেট্রল প্রতি লিটার ১৩০ টাকা লিটার হবে।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে দাবি করে দেশটির বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, 'যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কথা চিন্তা করেনি। অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়ে কিছুটা এডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুর্নবিবেচনা করা হবে।'
জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ দফায় দাম বাড়ানোর পর জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে কমে আসবে। সরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সেই শর্ত পূরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশেই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের বৃহত্তম বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বন্ধ রয়েছে পাবলিক বাস। দূর পাল্লার বাসের বাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও অনেক ক্ষেত্রেই পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে।
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির পর শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে আগের ভাড়ায় যানবাহন চলাচল করলেও এবার ভাড়া সমন্বয়ের জন্য বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও মালিক সমিতি। শনিবার বিকেল ৫টায় বনানীর বিআরটিএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই বৈঠক।
শুক্রবার রাতে মন্ত্রণালয় কর্তৃক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন দেয়ার পরপরই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তেল পাম্পে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অনেক জাগায় জ্বালানি তেল না পেয়ে পাম্প কর্মচারীদের উপরে চড়াও হয় সাধারণ মানুষ।
জ্বালানির জন্য পাম্পে ভীড়, হাহাকার ও ক্ষোভ:
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির খবর পাওয়ার পর থেকে সারাদেশে তেলের জন্য হাহাকার দেখা দেয়। জ্বালানির দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর থেকেই ফিলিং স্টেশনে ভিড় করতে থাকে মানুষ। বাড়তি দাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে কোথাও বিক্ষোভ, কোথাও বাগবিতণ্ডায় জড়ান গ্রাহকরা। শুক্রবার রাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগী ও জেলা শহরগুলোর পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি তেলের জন্য হুমড়ি খেয়ে পরে সাধারণ মানুষ।
ময়মনসিংহ, পঞ্চগড়, শেরপুর, সাভার (ঢাকা), হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, কক্সবাজার, বরগুনা, নীলফামারী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জসহ অনেক জেলায় জ্বালানির জন্য সংগ্রহ করতে মানুষের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। অনেক জাগায় দেখা দিয়েছে জ্বালানির সংকট। কোথাও কোথাও জ্বালানি না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে ক্রেতাদের।
গাজীপুরের শ্রীপুরে দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর ফিলিং স্টেশন থেকে তেল সরবরাহ না করায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন মোটরসাইকেল চালকরা। শুক্রবার রাত ১১টার মহাসড়কের স্টার ফিলিং স্টেশনের সামনে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা যায়।
পরিবহন সংকটে দেশজুড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি:
সরকার জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর পর এবার ভাড়া বাড়িয়েছে আন্তঃজেলাসহ দেশের বেশিরভাগ বাস অপারেটররা। শনিবার সকাল থেকে ঢাকায় আন্তঃনগর বাসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। শহরের রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা নগণ্য থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এছাড়া অনেক বাসের মালিক ও চালকরা তাদের কার্যক্রম আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পরিকল্পনা করছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভাগী ও বড় শহরগুলোতে যাত্রীবাহী বাসের চরম সংকট দেখা দেয়।
পরিবহন মালিকদের দাবি, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় বর্তমানে যে নির্ধারিত ভাড়া রয়েছে তা দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই বাস বন্ধ রাখছে তারা।
জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বাড়বে:
হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি চলমান মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সরকার যেভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর হিসাবের রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে সেটা সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। মূলত ডিজেলের ব্যবহারে যে খাতগুলোতে বেশি ব্যয় হয়, যেমন পরিবহন, কৃষিখাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে, সেক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিক্রিয়া হিসাবে আসবে।
আইএমএফের মতো ঋণ দানকারী সংস্থাগুলোর শর্ত মেনে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে এই গবেষক বলেন, দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঋণের আলোচনার শর্ত হিসেবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আমাদের কাছে মনে হয়েছে ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগটি যথাযথ হয়নি।
অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ যাওয়ার শঙ্কা:
ইতোমধ্যে লোডশেডিংয়ের ফলে উৎপাদন সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। এমন প্রেক্ষিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিণতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'কারখানায় গ্যাংস সংকট, সরকার নির্দেশিত লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ থাকে না ৫-৬ ঘণ্টা। ফলে দিনে ৬ ঘণ্টার জন্য জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়। জেনারেটরের ব্যবহার বাড়ায় বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পোশাক খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের হাতে প্রচুর অর্ডার রয়েছে। বড় অংকের ক্ষতিপূরণ দিয়ে এসব অর্ডারের পণ্য উৎপাদন করতে হবে।'
অনেক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না উল্লেখ করে মি. হাসান বলেন, 'এখন যে অর্ডারগুলো আছে এগুলোতো দুই-তিন মাস আগের অর্ডার নেওয়া। এগুলোর খরচ তো বেশি পড়বেই। নতুন করে যে অর্ডার আসবে সেটার উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দেশে পরিবহন ভাড়া বাড়বে, ট্রাক ভাড়া বাড়বে, জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি। এসবের সাথে শ্রমিকদের বেতনও বাড়াতে হবে। লোকসান থেকে বাঁচতে হলে অনেক কারখানা বন্ধ করা ছাড়া কেনো উপায় থাকবে না।'
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ:
এদিকে আজ সকাল থেকেই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পেট্রল ও ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর শ্যামলীতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দুইটার পর রাজধানীর শ্যামলী শিশু মেলার সামনে কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া পুলিশের একটি গাড়ি বিক্ষোভকারীরা ঘিরে ধরেন এবং সেটিতে ভাঙচুর চালান।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণঅধিকার পরিষদ, বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার রাতেই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। শনিবার সকাল থেকেই ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোও প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ছাত্রদলের এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘জেগে ওঠার’ ডাক দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি একটা ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে সমগ্র দেশের অর্থনীতির ওপরে। এটা বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর সময় নেই। আমাদের সবাইকে জেগে উঠতে হবে, জেগে উঠে এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আসুন, আমরা আজকে সেই লক্ষ্যে আরও দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি।’
এদিকে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববাজারে বর্তমানে তেলের বাজার নিম্নমুখী। এই সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে, কেবল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। অনতিবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে, পূর্বের মূল্য বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা:
কোনো ধরণের গণশুনানি, পূর্বালোচনা ছাড়াই হঠাৎ ঘোষণায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের নীতির সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে সংকটের সমাধান হবে না বলে দাবি করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম।
হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে না বলে দাবি করে এই গবেষক বলেন, 'ডিজেলের দাম বিশ্ববাজারে ব্যারেলে ১৭০ ডলার থেকে নেমে ১৩০ ডলারে নেমেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে ১০০ ডলারের মধ্যে এসেছে। এই দর এ বছর ৭০ থেকে ৮০ ডলারে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এমন সময় হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে বলে মনে হয় না।'
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই দাবি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের কোনো যৌক্তিকতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, 'সরকার দাবি করছে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে তেলের দাম বাড়ানো হলো। কারণ, সরকারের পক্ষে আর ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব না। এই দাবির পেছনে কোনো যুক্তি পাওয়া যায় না।'
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত কিছু দিনে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বিশ্ব ব্যাপী মন্দার আবহাওয়া তৈরি হওয়ায় তেলের দাম কমে যাচ্ছে। একই কারণে সামনে তেলের দাম আরও কমে যাবে। কাজেই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশে তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক না। ২০১৪ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম খুবই কম ছিল তখন দেশে তেলের দাম কমায়নি সরকার। ফলে, তাদের লাভ হয়েছে বেশ বড় অংকের। সরকারি হিসাবেই সেটা প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা। গত কিছু দিনে যদি লোকসানও হয় সেটা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। তাহলে, কয়েকগুণ বেশি লাভের টাকা তাদের হাতে রয়েছে। তেলের দামের এই ঊর্ধ্বমুখী তৎপরতার সময় সরকার চাইলে লাভের ওই টাকা থেকে সমন্বয় করতে পারত, এর জন্য তাদের হাতে তহবিল ছিল। এটা বেশি দিন করতেও হতো না, কারণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাচ্ছে।'
দেশের অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি পুরোপুরি অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে পরিষ্কার ভাবে বলছেন যে অকটেন ও পেট্রল আমাদেরকে বিশ্ব বাজার থেকে কিনতে হয় না। প্রাকৃতিক গ্যাসের বাই প্রডাক্ট হিসেবে এটা পাওয়া যায় এবং আমাদের চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ অকটেন, পেট্রলের মজুদ আছে। তাহলে এর দাম বাড়ানোর তো কোনো প্রশ্নই আসে না।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন