বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদেরআন্দোলন চলছেই। দুই সপ্তাহের অধিকাল ধরে চলমান এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ৩ শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গত ০৮ নভেম্বর ঢাকার গাজীপুরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এক মহিলা পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে বেশ গত ২৩ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করছে দেশটির পোশাক শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ নভেম্বর গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই সময় শ্রমিকরা তুসুকা নামের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। কারখানার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ঢাকা মিরপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে গার্মেন্টস কারখানা অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এসব অঞ্চলে পোশাক কারখানার নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ০৯ নভেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা জোরদারে ঢাকা ও তার আশপাশের জেলায় ৪৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে গত ০৮ নভেম্বর গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষের কারখানার বাইরে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় পুলিশ বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ হাজার পোশাক শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। গত ০৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে এই মামলাটি করা হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগে অন্তত ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও পোশাক কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েক করা হয়েছে; চলছে ব্যাপক ধর-পাকড়। ফলে ১০ নভেম্বর (শুক্রবার) ঢাকার গাজীপুর এলাকায় আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকদের তেমন একটা দেখা যায়নি।
এদিকে অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাজীপুর এলাকার ৯টি পোশাক তৈরির কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ১০ নভেম্বর সকালে কারখানাগুলোর সামনে বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমান আন্দোলনে ২২ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো বলে শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৩ অক্টোবর থেকে ঢাকার গাজীপুর, মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে পোশাক শ্রমিকেরা বিদ্যামন মজুরি ৮ হাজার ৩’শ টাকা থেকে থেকে ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে মজুরি বোর্ডে বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করা হলে সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি যা বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়েই কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ০৯ নভেম্বর গণভবনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে এই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেটা বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে। এরাই এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যাতে তারা চাকরি হারাবে, কাজ হারাবে, গ্রামে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন তারা কী চায়? কারখানা ধ্বংস হয়ে গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়, রপ্তানি ব্যাহত হয়, তাহলে তাদের কাজ থাকবে কোথায়? এটা তো তাদের বুঝতে হবে। আর উসকানিদাতা কারা?’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন