বলিভিয়ায় আবারও সেনা অভ্যুত্থান। তবে সেই অভ্যুত্থান সফল হল না। লাতিন আমেরিকায় সেনা অভ্যুত্থান কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। যদিও এবার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রীতিমতো রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানের চেষ্টা প্রতিরোধ করল সেই দেশের জনগণ।
উল্লেখ্য, লাতিন আমেরিকার এই দেশে বর্তমানে বামপন্থীরা ক্ষমতায়। স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত ১৯০ বার সে দেশে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তবে ১৯১ তম সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হল।
বলিভিয়ার বামপন্থী দল ‘মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম’-র নেতা লুইস আর্সে সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন ২০২০ সালে। তাঁর আগে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বামপন্থী নেতা ইভো মোরালেস। ২০০৫ সালে ইভো মোরালেস ক্ষমতায় আসার আগে বলিভিয়া ছিল লাতিন আমেরিকায় রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে অস্থির একটি দেশ।
২০১৯ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতা হারান। ইভো মোরালেস বাধ্য হয়ে মেক্সিকোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অবশেষে ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয় ‘মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম’। কিন্তু দেশের বাইরে থাকায় ইভো মোরালেসের পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট হন আর এক বামপন্থী নেতা লুইস আর্সে।
প্রসঙ্গত, বামপন্থীরা ক্ষমতায় আসার পর ইভো দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু শাসক দল ‘মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম’ দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। বর্তমান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্টের স্নায়ুযুদ্ধে আবারও বলিভিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পাশাপাশি কোভিড পরবর্তী সময়ের অর্থনৈতিক সঙ্কটও বেড়েছে।
আর সেই সুযোগটাই নিয়েছিল বলিভিয়ার সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রধান হুয়ান হোসে জুনিগার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সেকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ছক কষে। বুধবার বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজের মুরিলো চত্বরে সাঁজোয়া গাড়ি ও ট্যাঙ্ক নিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী। হুয়ানের দাবি – ‘বলিভিয়ার গণতন্ত্র ফেরাতে এই সেনা অভ্যুত্থান জরুরী’।
ইতিমধ্যে, নিজেদের মতানৈক্য দূরে রেখে সেনাবাহিনীকে রুখে দেওয়ার ডাক দেন সাবেক বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস ও বর্তমান বামপন্থী প্রেসেডেন্ট লুই আর্সে। ইভো মোরালেস সরাসরি এই সেনা অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। যুযুধান দুই বাম নেতাই গণজমায়েতের ডাক দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ন জায়গার দখল নিতে বলেন কর্মী-সমর্থকদের। গণপ্রতিরোধের মুখে পিছু হটে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট অনুগত সেনাবাহিনীও এই প্রতিরোধে অংশ নেয়।
প্রেসিডেন্টের বাসভবনের মধ্যেই এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় – সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের কথা কাটাকাটির মুহূর্ত। লুইস আর্সে সেনাবাহিনীর প্রধানকে অভ্যুত্থান বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলছেন – আপনাকে ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর প্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, নতুন কমান্ডার নিয়োগ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ইভো মোরালেসকে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেই।
অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন – অভ্যুত্থানের মূল চক্রী সেনাবাহিনীর প্রধান হুয়ান হোসে জুনিগার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন