লাতিন আমেরিকার দেশ চিলি। চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতলেন তরুন বামপন্থী প্রার্থী গাব্রিয়েল বরিস। প্রতিদ্বন্দ্বী অতি দক্ষিনপন্থী হোসে আন্তোনিও কাস্তকে পরাজিত করলেন ৩৫ বছর বয়সী তরুন ছাত্রনেতা গাব্রিয়েল। প্রায় প্রতিটি সংবাদসংস্থার ভোট সমীক্ষাতেই এগিয়ে ছিলেন বরিস। তবে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি ক্ষমতায় আসবেন, এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেননি।
মূলত সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে উঠে আসেন গাব্রিয়েল। গত কয়েক বছরে যে দুর্বার ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষী ছিল এই লাতিন আমেরিকার দেশটি, তাঁর নেতৃত্বে ছিলেন বামপন্থী এই ছাত্রনেতা। চিলিতে সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি।
অতি দক্ষিনপন্থী কাস্তের ভাই ছিলেন চিলির একনায়ক অগাস্তো পিনোশেটের অন্যতম উপদেষ্টা। নির্বাচনী প্রচারে পিনোশেটের গুণগান করেছেন। পিনোশেটের একনায়কতন্ত্রকে সমর্থন করেছিলেন কাস্ত। চিলির সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, কাস্তের জার্মান বাবা নাৎসি ছিলেন। তিনি জিতলে স্বাভাবিকভাবেই চিলিতে আবার পিনোশেটের শাসন ব্যবস্থা চালু করতেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেনারেল পিনোশেটের বাহিনীর হাতে নিহত হন চিলির জনপ্রিয় বামপন্থী রাষ্ট্রপতি সালভাদোর আলেন্দে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)’র বিশ্বস্ত পিনোশেট ১৯৭৩-৯০ সাল পর্যন্ত চিলি শাসন করেছে। বেছে বেছে বামপন্থীদের কারাগারে বন্দি করে সামরিক বাহিনী। গোপনে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে চিলি জুড়ে শুরু হয় গণআন্দোলন। দাবি ওঠে সামরিক শাসক পিনোশেটের প্রবর্তিত সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। ২০২০-এর গণভোটে প্রায় ৭৮% চিলের জনতা মতপ্রদান করলেন সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে। প্রায় ১৮% ভোট এবং ২৮ জন প্রতিনিধি নিয়ে চিলির কমিউনিস্ট পার্টি সংবিধান সভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ১৬% ভোট পেয়ে বামপন্থী স্বাধীন প্রার্থীদের ২৬ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। যাঁদের ভাবনা, প্রস্তাব ও কার্যক্রমের সঙ্গে বাম জোটের বিশেষ ফারাক নেই। ২০% ভোট ও ৩৭-টি আসন পেয়ে সংবিধান সভায় প্রথম স্থান অধিকার করলেও দক্ষিণপন্থী জোট এক-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করতে সক্ষম হয় নি।
এই আবহেই চিলিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। একদিকে বামপন্থী জোটের গাব্রিয়েল বরিস। অন্যদিকে সামরিক শাসনের গুণগ্রাহী অতি দক্ষিনপন্থী হোসে আন্তোনিও কাস্ত। চিলির সংবিধান অনুযায়ী, প্রথম রাউন্ডের ভোটে কেউ ৫০% ভোট না পেলে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট হয়। প্রথম রাউন্ডে অবশ্য কাস্ত ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সেখানে ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন গাব্রিয়েল। অবশেষে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই প্রার্থীর দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বামপন্থী গাব্রিয়েল প্রায় ৫৬% ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
একনায়কতন্ত্রের ঘোর বিরোধী বামপন্থী গাব্রিয়েল বরিস জানিয়েছেন, তিনি চিলির একাধিক প্রশাসনিক বিষয়ের সংস্কার করবেন। বদলাবেন কর ব্যবস্থা। ধনী ব্যক্তিদের উপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে সাধারণ মানুষের উপর থেকে করের চাপ কমাবেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন