ইতিহাসের মুখোমুখি কলম্বিয়া। এই প্রথম ক্ষমতায় বামপন্থীরা। ল্যাটিন আমেরিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র এই দেশটিতে এর আগে কখনও কোনো বাম সরকার ক্ষমতায় আসেনি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল দক্ষিণপন্থীরা। এবার ক্ষমতাসীন দক্ষিণপন্থীদের কয়েক দশকের দুর্নীতি ও বৈষম্যের রাজনীতিকে ছুড়ে ফেলেছে কলম্বিয়ার জনগণ।
কলম্বিয়ায় রবিবার (১৯ জুন) ছিল দ্বিতীয় দফার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কলম্বিয়ার নির্বাচন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ৫০.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দক্ষিণপন্থী ধনকুবের রোডলফো হার্নান্দেজকে হারিয়েছেন প্রাক্তন গেরিলা নেতা তথা বামপন্থী গুস্তাভো পেত্রো। ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন কলম্বিয়ার নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ফ্রান্সিয়া মার্কেজ। তিনি হবেন কলম্বিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে গত ২৯ মে ছিল প্রথম প্রথম দফার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ভোট গণনার পর বাম জোট ‘প্যাক্টো হিস্টোরিকা’ বা ‘হিস্টোরিক প্যাক্ট’ মনোনীত প্রার্থী গুস্তাভো পেত্রো পেয়েছিলেন ৪০.৩১ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন দক্ষিণপন্থী রোডোলফো হার্নান্দেজ।
কলম্বিয়ার সংবিধান অনুযায়ী প্রথম রাউন্ডে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রথম দুজনকে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। সেই হিসেবে রবিবার (১৯ জুন) পেত্রো এবং হার্নান্দেজের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।
উল্লেখ্য, কলম্বিয়ার রাজনীতিতে বামপন্থীরা দীর্ঘকাল সংসদীয় রাজনীতির পথ পরিহার করেছিলেন। M-19 বা F.A.R.C-এর মতো দলগুলি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টাই করে এসেছে দীর্ঘকাল এবং সেই প্রচেষ্টা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি। উপরন্তু মার্কিন সমর্থনে কলম্বিয়ান সরকার সাফল্যের সঙ্গে বিপ্লব প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। একের পর এক বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নিস্ট, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী খুন হয়েছেন। এই পথ সঠিক পথ নয়, তা উপলব্ধি করে নব্বই-এর দশক থেকে গেরিলা বাহিনীগুলি অস্ত্র পরিত্যাগ করে সংসদীয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী গুস্তাভো পেত্রোও এক সময় গেরিলা নেতা ছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারে পেত্রো জানিয়েছিলেন - তিনি জিতলে কলম্বিয়া বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর তাঁবেদারি করবে না। ল্যাটিন আমেরিকার বাকি বামপন্থী সরকারগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলারও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বলা বাহুল্য, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এই সকল প্রস্তাব পেত্রোকে কলম্বিয়ার মার্কিন সমর্থক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় করেনি। সেনাপ্রধান জেনারেল এডুয়ার্ডো জাপাতেইরো তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদ্গার করেছিলেন। তাই পেত্রো নির্বাচনে জিতলেও সামরিক ক্যু-এর আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন