ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই সপ্তাহের শুরুতে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় আঘাত হানা বিধ্বংসী ৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বুধবার ৯,৬৩৮ এ পৌঁছেছে। দুই দেশের খারাপ আবহাওয়া এবং তুষারপাতের কারণে উদ্ধার কাজ চালানো ক্রমশ "কঠিন" হয়ে উঠছে।
তুরস্কের প্রশাসনিক স্তরের সর্বশেষ আপডেট অনুসারে, দুর্যোগ ও জরুরী ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্সি (এএফএডি) জানিয়েছে, বর্তমানে সামগ্রিকভাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭,১০৮ এবং আহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৪০,৯১০। এখবর জানিয়েছে আনাদোলু নিউজ এজেন্সি।
AFAD জানিয়েছে, বর্তমানে ৯৬,৬৭০ টিরও বেশি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল ভূমিকম্প বিদ্ধস্ত অঞ্চলে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে।
এছাড়াও "তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে, সাহায্যের জন্য অন্যান্য দেশ থেকে আসা ৫,৩০৯ জন কর্মীকে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় পাঠানো হয়েছে।"
উদ্ধারকারী দল ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কম্বল, তাঁবু, খাবার এবং মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দল পাঠানো হয়েছে।
এএফএডি জানিয়েছে, ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়া মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৭০,৮১৮টি পারিবারিক তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও খননকারী, ট্রাক্টর এবং বুলডোজার সহ ৫,৪৩৪ টি যানবাহনকে দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
ভূমিকম্পে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দুই অঞ্চল কাহরামানমারাস এবং হাতায় যেতে পারেন রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। বুধবার, বিবিসি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে উদ্ধৃত করে একথা জানিয়েছে। তিনি সোমবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল পাজারসিকেও যাবেন।
সিরিয়ায়, সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চলে কমপক্ষে ২,৫৩০ জন মারা গেছে, এবং প্রায় ৪,০০০ জন আহত হয়েছে।
ত্রাণ সংস্থা ও উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা।
উদ্ধারকর্মীরা এখনও পর্যন্ত সমস্ত দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে পারেননি। কারণ প্রবল ঠান্ডা এবং আর্দ্র আবহাওয়া দুই দেশের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ফলে তাপমাত্রাও হিমাঙ্কের নীচে গেছে। বুধবার তাপমাত্রা শূন্যের নিচে কয়েক ডিগ্রি নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
এই অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি এবং তুষারপাত অব্যাহত থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সতর্ক করেছে যে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তুরস্কের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলটি কয়েক হাজার সিরীয় শরণার্থীর আবাসস্থল, যারা গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে তাদের জন্মভূমিতে পালিয়ে এসেছে।
সোমবার ভোর ৪.১৭ মিনিটে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস প্রদেশে বিধ্বংসী ৭.৮ মাত্রার কম্পন আঘাত হানে। এর কয়েক মিনিট পরেই গাজিয়ানটেপ প্রদেশে ৬.৪ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়।
৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ২৪.১ কিলোমিটার গভীরে গাজিয়ানটেপের নুরদাগি থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে। এরপর দুপুর ১.৩০ নাগাদ ৭.৫ মাত্রার তৃতীয় কম্পন কাহরামানমারাসে আঘাত হানে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তৃতীয় কম্পনটি "আফটারশক নয়"।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হাতায় এবং সিরিয়ার উত্তরের আলেপ্পো শহরে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। লেবানন, ইসরায়েল এবং সাইপ্রাসেও এই কম্পন অনুভূত হয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান মঙ্গলবার ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও তুরস্কে সাত দিনের জাতীয় শোক পালন করা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন