যে শ্রমিকরা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করেছে স্টেডিয়াম, হোটেল, রাস্তা-ঘাট সহ বিভিন্ন অবকাঠামো- এখন তাঁদেরই ঠায় হচ্ছে না কাতারের রাজধানী দোহাতে। সকলকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ২০ নভেম্বর কাতারে শুরু হচ্ছে ফিফা (FIFA) ফুটবল বিশ্বকাপ। এই খেলা দেখতে আসা পর্যটকদের থাকার জায়গা করে দিতে- দোহার বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর, উচ্ছেদ করা হয়েছে সেসকল মানুষদের, যাদের হাতেই গড়ে উঠেছে বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম।
জানা যাচ্ছে, কাতারের মোট জনসংখ্যা- মাত্র ৩০ লক্ষ। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক। জীবন জীবিকার টানে যারা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ফিলিপাইন, কেনিয়া, উগান্ডা থেকে কাতারে গিয়েছেন।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, স্টেডিয়াম ও অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করা প্রবাসী শ্রমিকদের হঠাৎ করে উচ্ছেদের খবর নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এক প্রবাসী শ্রমিক জানান, দোহার আল মানসুরা জেলায় থাকা প্রায় ১২০০ জনকে কর্তৃপক্ষ বুধবার রাত ৮টার দিকে ঘর ছাড়ার জন্য বলে। চলে যাওয়ার জন্য তাদের মাত্র দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।
পরে মিউনিসিপাল অফিসিয়ালরা রাত সাড়ে ১০টার দিকে এসে তাদেরকে জোর করে ঘর থেকে বের করে দেয় এবং পুরো বাড়ি তালাবদ্ধ করে দেয়। ফলে তাদের কেউ কেউ নিজেদের জিনিসপত্র নেওয়ার সুযোগও পাননি।
পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তা তুলে ধরেছেন ইউনুস নামে এক বাংলাদেশি ট্রাক ড্রাইভার। তিনি জানান, জোরপূর্বক তাঁকে একটি ব্লক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। গত তিনরাত তিনি আল মানসুরার একটি রাস্তায় ফ্ল্যাট-বেড ট্রাকে ঘুমিয়েছিলেন।
শনিবার রাতে তিনি বলেন, 'প্রথম রাতে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। সবার জন্য অন্য জায়গায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। এখানেও পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না।'
তিনি বলেন, 'এই ট্রাকটি আমার জীবন। আমি এটিকে ছাড়ব না, যতক্ষণ না আমি এটিকে পার্ক করতে পারি।' ইউনূস বলেন, তিন বছরের মধ্যে তৃতীয়বার তাকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, যে ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টগুলি থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, প্রায় সবগুলোই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভাড়া নিয়েছে কাতার সরকার।
জানা যাচ্ছে, কাতার বিশ্বকাপ আয়োজকরা ওয়েবসাইটে আল মানসুরা ও অন্যান্য জেলায় অবস্থিত বেশকিছু ভবনের তালিকা প্রকাশ করেছে। যে ভবনের একেকটি ফ্ল্যাটে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি রাতে ২৪০ থেকে ৪২৬ মার্কিন ডলার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন