মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জার প্রয়াত। বিতর্কিত এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যু কালের বয়স হয়েছিল ১০০। কিসিঞ্জারের ঘনিষ্ঠরা ইতিমধ্যেই তাঁর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। যদিও কীভাবে মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এই কূটনীতিবিদ জো বিডেন সহ প্রায় এক ডজন রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি নোবেল শান্তি পুরস্কারও জিতেছিলেন।
মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের অধীনে বিদেশ সচিব থাকাকালীন তিনি আলোচনা ও সমালোচনার শিরোনামে উঠে আসেন। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন করা কিংবা যেকোন মূল্যে মার্কিন পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য তিনি নিজ দেশেও সমালোচিত হয়েছেন। ‘যুদ্ধ অপরাধী’ তকমাও পেয়েছেন।
কিসিঞ্জার ১৯২৩ সালে নাৎসি জার্মানিতে জন্ম গ্রহণ করেন। হিটলারের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসেন আমেরিকায়। নিক্সনের জাতীয় উপদেষ্টা হিসাবে যুক্ত হওয়ার আগে কিসিঞ্জার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৬৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলছিল। আমেরিকা কম্বোডিয়াতে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে চলেছে। মূলত কিসিঞ্জারের নির্দেশেই এমনটা করা হচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মতে এটি – “ম্যাড ম্যান থিওরি”। যুদ্ধে জেতার জন্য আমেরিকা সব করতে পারে, উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট নেতৃত্বকে এই বার্তা দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
কিসিঞ্জারের কুখ্যাত কিছু কার্যকলাপঃ
১ - সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড।
২ - চিলির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বামপন্থী সরকারকে উৎখাত এবং স্বৈরাচারী পিনোশের গণহত্যাকে সমর্থন।
৩ - ইন্দোনেশিয়ার কুখ্যাত স্বৈরাচারী সামরিক শাসকের পূর্ব তিমোর আক্রমণকে সমর্থন।
৪ - ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কম্বোডিয়ায় বেআইনিভাবে বোমা নিক্ষেপ করে গণহত্যা।
৫ - দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারকে অ্যাঙ্গোলা আক্রমণে সমর্থন।
৬ – বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গণহত্যাকে প্রচ্ছন্নভাবে সমর্থন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, ভারতীয়দের সম্পর্কে তাঁর মনোভাব ছিল অত্যন্ত নিম্ন। ভারতীয়দের ‘বেজন্মা’ এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ‘বিচ’ বলে আক্রমণ করেছিলেন।
৭ - সম্প্রতি আমেরিকার ইরাক আক্রমণকেও সমর্থন করেছিলেন।
এতো সমালোচনা, বিতর্কের পরেও তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ‘ভিয়েতনাম যুদ্ধ’ শেষ করার জন্য। এর প্রতিবাদে নোবেল কমিটির দুজন পদত্যাগও করেছিলেন। সেই সময় অনেকেই কটাক্ষ করে বলেছিলেন – “নোবেল ওয়ার প্রাইজ”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন