এক নাবালককে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ফ্রান্স জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। যে বিক্ষোভ দমনে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৭ জনকে। গত মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১৭ বছর বয়সী নাহেল এম। পুলিশের অভিযোগ, ট্রাফিক সিগনাল ভেঙে ওই কিশোর পালাবার সময় তাঁকে গুলি করা হয়।
মঙ্গলবারের এই ঘটনার পরেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করেন এবং বিক্ষোভে শামিল হন। যদিও পুলিশের দাবি, ট্রাফিক সিগন্যালে ওই কিশোরকে থামতে বলার পরেও তিনি না থেমে পুলিশি নির্দেশ অমান্য করার পরেই তাঁকে গুলি করা হয়।
স্থানীয় ফরাসি সংবাদমাধ্যমের মতে, নাহেল এম হত্যার প্রতিবাদে বুধবার দ্বিতীয় দিনেও অশান্তি অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ওই কিশোরকে গুলি করা হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন দিচ্ছে এবং দোকান ভাঙচুর করছে।
ফরাসি সংবাদপত্র লে মন্ডের খবরে বলা হয়েছে, নাহেল যে শহর থেকে এসেছেন সেই নানটেরেতে, আংশিকভাবে পুলিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। প্যারিসের একাধিক জায়গায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশ স্টেশন লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
উত্তরাঞ্চলীয় শহর লিলে-তে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এছাড়াও বুধবার, নিহত কিশোরকে শ্রদ্ধা জানাতে রেনে শহরে জড়ো হওয়া প্রায় ৩০০ জন সাধারণ মানুষকে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই গুলিচালনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিষয়টিকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। যদিও রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যে ক্ষোভ বেড়েছে পুলিশ মহলে। পুলিশ ইউনিয়ন থেকে এই মন্তব্যের সমালোচনা করে বলা হয়েছে তাড়াহুড়ো করে এক অফিসারকে অভিযুক্ত হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অ্যালায়েন্স পুলিশ ইউনিয়ন দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে নির্দোষ বলে ধরে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইট এসজিপি পুলিশও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে, এই মন্তব্য "পুলিশবিরোধী বিদ্বেষ"-কে উত্সাহিত করবে।
নাহেলকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, যে তিনি গুলি চালিয়েছিলেন কারণ তাঁর মনে হয়েছিল তিনি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। বিবিসির রিপোর্ট অনুসারে, আপাতত ওই পুলিশ আধিকারিককে স্বেচ্ছায় হত্যার অভিযোগে হেফাজতে রাখা হয়েছে।
নাহেল এই বছর ফ্রান্সে দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাকে ট্রাফিক নির্দেশ অমান্য করায় পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। গত বছর এভাবেই ফ্রান্সে রেকর্ড ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন