ফ্রান্সে রাজনৈতিক ডামাডোল অব্যাহত। সে দেশের রাজনৈতিক মহল আপাতত তিনটি শিবিরে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে আছে চরম দক্ষিণপন্থী ‘ন্যাশনাল র্যালি’। অন্যদিকে আছে কমিউনিস্ট-গ্রীন-সোশ্যালিস্টদের ‘নিউ পপুলার জোট’ এবং মধ্যপন্থী শাসক দল ‘রেনেসাঁ’।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে চরম দক্ষিণপন্থী ‘ন্যাশনাল র্যালি’ (RN)-র লি পেন এবং জর্ডন বারডেল্লার বিপুল ভোটে জয়ের পরে মেয়াদের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন হতে চলেছে ফ্রান্সে। আগামী ৩০ জুন প্রথম রাউন্ডের নির্বাচন।
প্রথম রাউন্ডের নির্বাচনে জয়ী প্রথম দুই দলের মধ্যে হবে দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচন। তবে সম্প্রতি ফ্রান্সে ‘অভিবাসন বিরোধী’ চরম দক্ষিণপন্থীদের উত্থানে কপালে ভাঁজ পড়েছে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর। লে পয়েন্ট (Le Point) ওয়েবসাইটের সর্বশেষ জনমত সমীক্ষায় ৩০ জুন প্রথম রাউন্ডের নির্বাচনে দক্ষিণপন্থী RN পেতে পারে ২৯.৫% ভোট। বামপন্থী জোট পেতে পারে ২৮.৫% ভোট। তৃতীয় স্থানে নেমে যেতে পারে মধ্যপন্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দল ‘রেনেসাঁ’। তারা পেতে পারে মাত্র ১৮% ভোট। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে সরাসরি মুখোমুখি হতে পারে বাম ও ডান শিবির।
অতীতে ফ্রান্সের বাম দলগুলির মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ থাকলেও এই মুহূর্তে দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র্যালিকে রুখে দিতে একজোট হয়েছে তারা। ফ্রান্সের সোশ্যালিস্ট বাম জোট ‘নিউ পপুলার ফ্রন্ট’-এ যোগ দেওয়াতে আসন্ন নির্বাচনে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই জানাচ্ছে একাধিক সমীক্ষা।
বাম জোটের অন্যতম নেতা রাফায়েল গ্লুকসম্যান বলেন – ‘আমার কাছে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ন্যাশনাল র্যালি যাতে নির্বাচনে জিততে না পারে। ফ্রান্সকে কোনমতে লি পেন পরিবারের (ন্যাশনাল র্যালি শীর্ষ নেত্রী) হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।‘
বাম জোটকে সমর্থন করেছে ফ্রান্সের সবচেয়ে শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন সিজিটি। ইউনিয়নের প্রধান সোফি বিনেট বলেছেন আগামী সপাহেই ফ্রান্স জুড়ে ২০০ টি বিক্ষোভ সংগঠিত করবে। তাঁর কথায় – “চরম দক্ষিণপন্থীদের রুখে দেওয়া আমাদের নৈতিক কর্তব্য।“
উল্টোদিকে সুর চড়িয়েছেন দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র্যালির নেতা জর্ডন বারডেল্লা। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন – “একমাত্র আমরাই পারি বামপন্থার বিপদকে রুখে দিতে।“ পাশাপাশি ফ্রান্সে কড়া অভিবাসন নীতির লাগু করার কথাও বলেছেন।
উল্লেখ্য, লে পয়েন্ট-ক্লাস্টারের সমীক্ষায় বামপন্থী জোট (নিউ পপুলার ফ্রন্ট) দক্ষিণপন্থীদের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। ৫৭৭ আসনের জাতীয় পরিষদে দক্ষিণপন্থী ‘ন্যাশনাল র্যালি’ জিততে পারে ১৯৫-২৪৫টি আসন। বামপন্থীরা পেতে পারে ১৯০-২৩৫ টি আসন। ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী দলের আসন কমে ১০০ এর আশেপাশে থাকবে।
চরম দক্ষিণপন্থীদের এই উত্থানে রীতিমত আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের বিশিষ্টজনেরা। ইতিমধ্যে ফ্রান্সের জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে দক্ষিণপন্থীদের ভোট না দেওয়ার আবেদন করেছেন দেশবাসীর কাছে। শুধুমাত্র এমবাপে নয় – ফ্রান্সের ২০০ জন ক্রীড়াবিদও এমন আবেদন জানিয়েছেন দেশবাসীর কাছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন