পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সৈন্যদের সাথে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের সময় চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির ৪২ জন সৈন্যর মৃত্যু হয়েছিলো। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্র The Klaxon এই দাবি করেছে। গত বছরের ১৫ জুন, ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে চীনা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছিলো। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে করা দাবির বিষয়ে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এখনও নীরব৷
সোশ্যাল মিডিয়া গবেষকদের একটি গ্রুপের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই দাবি করেছেন সম্পাদক অ্যান্থনি ক্ল্যান। সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া গবেষকদের একটি গ্রুপ দ্বারা প্রদত্ত প্রমাণ, যা দ্য ক্ল্যাক্সন স্বাধীনভাবে তৈরি করেছে, এই দাবিকে সমর্থন করে। মনে করা হচ্ছে চীনের হতাহতের সংখ্যা ৪ বলে বেজিং যে দাবি করেছিলো আসল মৃতের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি।
গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ জুনের প্রাণঘাতী যুদ্ধটি একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় সৈন্যরা গালওয়ান নদীর একটি স্রোতের উপর সংঘর্ষের তিন সপ্তাহ আগে ২২ মে এই অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ও চীনা সামরিক কর্মকর্তারা ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে "সঙ্কট কমানোর" প্রয়াসে সীমান্ত বরাবর একটি "বাফার জোন"-এ সম্মত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাফার জোন তৈরি করা সত্ত্বেও, চীন জোনের ভেতরে "অবৈধ কাঠামো" তৈরি করছে, যার মধ্যে তাঁবু খাড়া করা এবং ডাগআউট তৈরি করা এবং এই এলাকায় ভারী যন্ত্রপাতি স্থানান্তর করা হয়েছে।
"একজন ওয়েইবো ব্যবহারকারী ওরফে কিয়াং নামক এক ব্যক্তি, যিনি এই এলাকায় কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন, তার মতে, PLA পারস্পরিক চুক্তি লঙ্ঘন করে এই বাফার জোনে কাঠামো তৈরি করছিল এবং এপ্রিল ২০২০ থেকে বাফার জোনের মধ্যে তার টহল সীমা বাড়ানোর চেষ্টা করছিল।" প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: "৬ জুন, ৮০ জন পিএলএ সৈন্য সেতুটি ভেঙে ফেলতে আসে। অন্যদিকে প্রায় ১০০ সৈন্য এটি রক্ষা করতে যায়।"
প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে কাগজে বলা হয়েছে যে ৬ জুনের অচলাবস্থার সময়, উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা "বাফার জোন লাইন অতিক্রমকারী সমস্ত কর্মীকে প্রত্যাহার করতে" এবং "রেখা অতিক্রমকারী সমস্ত সুযোগ-সুবিধাগুলি ভেঙে দিতে" সম্মত হয়েছিল। তবে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চীন চুক্তি মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, "পিএলএ তার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি এবং সম্মতি অনুসারে তার নিজস্ব কাঠামো ভেঙে ফেলার পরিবর্তে, ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা নির্মিত নদী পারাপারের সেতুটি গোপনে ভেঙে দেয়।"
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "১৫ই জুন ২০২০ তারিখে, কর্নেল সন্তোষ বাবু তার সৈন্যদের নিয়ে রাতে গালওয়ান উপত্যকার বিতর্কিত এলাকায় চীনা দখলদারি মুক্ত করতে গেছিলেন। যেখানে কর্নেল কুই ফাবাও প্রায় ১৫০ জন সৈন্যের সাথে উপস্থিত ছিলেন।"
এই সময় ফাবাও তার সৈন্যদের ৬ জুনের বৈঠকে করা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পরিবর্তে যুদ্ধের নির্দেশ দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে "কর্ণেল ফাবাও যে মুহূর্তে আক্রমণ করেছিলেন সেই মুহূর্তে তাঁকে ভারতীয় সেনারা ঘিরে ফেলে"।
"তাঁকে উদ্ধার করার জন্য, পিএলএ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার চেন হংজুন এবং সৈনিক চেন জিয়ানগ্রং ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রবেশ করেন এবং ভারতীয় সেনাদের সাথে স্টিলের পাইপ, লাঠি এবং পাথর ব্যবহার করে (তাদের) কমান্ডারকে পালানোর জন্য কভার দেওয়ার জন্য শারীরিক সংঘর্ষ শুরু করেন"। সেই লড়াইয়ে ভারতের কর্নেল সন্তোষ বাবু নিহত হন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে "বেশ কিছু ওয়েইবো ব্যবহারকারী" বলেছে: "ওয়াং সহ কমপক্ষে ৩৮ জন পিএলএ সৈন্য সেই রাতে ভেসে যায় এবং ডুবে যায়। যার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত চার সৈন্যের মধ্যে শুধুমাত্র ওয়াং-এর নাম ঘোষণা করা হয়"।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, "ঘটনার পর, সৈন্যদের মৃতদেহ প্রথমে শিকুয়ানহে শহীদ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে নিহত সৈন্যদের স্থানীয় শহরে স্থানীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সৎকার করা হয়।" ভারত দাবি করেছে যে এই ঘটনায় ২০ জন সেনা নিহত হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন