ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে সোমবার ইন্দোনেশিয়ার প্রধান দ্বীপ জাভাতে কমপক্ষে ৫৬ জনের মৃত্যু হলো। প্রায় ৭০০ জন আহত হয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার সরকারী সূত্রে জানা গেছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৫.৬। ভূমিকম্পের তীব্রতা মাটির বেশি গভীরে না গেলেও ভূমিধস হয়েছে ভালোই। ভূমিকম্পের জেরে প্রচুর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের প্রধান কেন্দ্রস্থল পশ্চিম জাভার সিয়ানজুর অঞ্চল। রাজধানী জাকার্তা পর্যন্ত এর কম্পন অনুভূত হয়েছে। কম্পনের জেরে আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাতারাতি ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া সংস্থার প্রধান দ্বিকোরিতা কর্নাওয়াতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, "আমরা আপাতত লোকজনকে খোলা জায়গায় থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ, যে কোনও সময় ফের ভূমিকম্প বা ভূমিধস হতে পারে।"
ভূমিকম্পের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শহরের স্থানীয় প্রশাসনিক প্রধানের কথায়, এখনও পর্যন্ত নিহত এবং আহতদের কোনও নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র একটি হাসপাতালের মৃত ও আহতদের সংখ্যা জানা গেছে। আশেপাশে এমন অনেক গ্রাম আছে, যেখানে প্রচুর মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
পশ্চিম জাভার সিয়ানজুর শহরের প্রশাসনিক প্রধান হারমান সুহারম্যান সংবাদমাধ্যমে জানান - "আমি আপাতত যে তথ্য পেয়েছি সেই অনুযায়ী, সায়াং হাসপাতালেই প্রায় ২০ জন মারা গেছে এবং প্রায় ৩০০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ায় বেশিরভাগ মানুষেরই হাড় ভেঙে গেছে।"
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভূমিকম্পের জেরে শহরের দোকানপাট, একটি হাসপাতাল এবং একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ির ছাদ ধসে গিয়ে ধ্বংসাবশেষ রাস্তায় পড়ে আছে।
সুহারম্যান জানান, শহরের বাইরে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা এখনও হয়ত ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছে। যার ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সায়াং হাসপাতাল থেকে জরুরি বিভাগের লোকদের সাহায্যে গ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ প্রধান সুহারিয়ন্তোর কথায়, তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত সিয়ানজুর এলাকায় কমপক্ষে ১৪ জন মারা গেছে। তবে, জাকার্তায় কোনো হতাহতের বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সিয়ানজুরের পুলিশ প্রধান ডনি হেরমাওয়ান সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ভূমিধস থেকে একজন মহিলা এবং একটি শিশুকে উদ্ধার করা গেলেও আরও একজন তৃতীয় ব্যক্তিকে বাঁচানো যায়নি। ধসের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
মায়াদিতা ওয়ালুয়ো নামের এক প্রতক্ষ্যদর্শীর কথায়, "কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ দেখি মেঝে কেঁপে উঠল। আমি সেই কম্পন স্পষ্ট অনুভব করেছি। বেশকিছু সময়ের জন্য কম্পন স্থায়ী হয়েছিল। ১৪ তলা থেকে নীচের দিকে নেমে আসার সময় আমার পা ক্রমশ যেন সংকুচিত হয়ে আসছিল। এখনও আমার মাথা যেন ঘুরছে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন