ইরানে ‘নীতি পুলিশ’ বিলুপ্তির ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোয় ৩ (তিন) দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে হিজাব বিরোধী আন্দোলনকারীরা। সূত্রের খবর, আগামী বুধবার পর্যন্ত রাজধানী তেহরানের আজাদি স্কোয়ারে তিন দিনের ধর্মঘট ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (গতকাল), ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফার মন্তাজেরি জানান, 'ইরানের বিচারবিভাগের সঙ্গে নীতি পুলিশের কোনও সম্পর্ক না থাকায় এই ইউনিটটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
মনতাজেরি আরও জানান, 'গত বুধবার ইরানি পার্লামেন্টের সাংস্কৃতিক কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছেন দুই বিভাগের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এ সময় হিজাব আইনে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের মধ্যে বিস্তারিত কথা হয়েছে।' তবে, নীতি পুলিশের বিলুপ্তি নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেয়নি ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যেখান ‘নীতি পুলিশের’ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন।
এদিকে, ইরানে 'নীতি পুলিশ' বিলুপ্তির খবর ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম। খবরে বলা হয়েছে, 'নীতি পুলিশ বিচার বিভাগের অধীনে নয়, সেটা দেখভাল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সুতরাং, নীতি পুলিশ বাতিলের যথাযথ কর্তৃপক্ষ নয় বিচার বিভাগ। মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরির দায়িত্বের অধীনে নীতি পুলিশের বিষয়টি পড়েনা।’
ইরানি সংবাদ মাধ্যমে এই ধরণের খবর প্রকাশের পরেী হিজাব বিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। আবার নড়েচড়ে বসেছেন তাঁরা। ‘নীতি পুলিশ’ বিলুপ্তির ঘোষণা নিয়ে নিশ্চয়তা পেতে তাঁরা আবার ৩ দিনের ধর্মঘট এবং সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (AP) জানিয়েছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর, পুলিশি হেফাজতে কুর্দিশ বংশোদ্ভূত ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনির (Mahsa Amini) মৃত্যুর পর ইরান জুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে তা নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। টানা দু মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে বিক্ষোভ৷ জনরোষের চাপে রয়েছে ইব্রাহিম রইসি সরকার।
সংবাদ সংস্থা AP আরও জানিয়েছে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকেই অনেক জায়গায় নারীরা তাদের হিজাব পুরিয়ে দিয়েছে। তাঁরা মুসলিম ধর্মগুরুদের মাথার পাগড়ি ছিঁড়ে ফেলে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে ইরানের একাধিক শহরে ‘নীতি পুলিশ’ অফিসারের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইরানের নীতি পুলিশ তৈরি হয় ২০০৬ সালে। সেই সময় দেশে শাসনক্ষমতায় মাহামুদ আহমেদিনেজাদ। নীতি পুলিশের নাম দেওয়া হয় গাশত-ই এরশাদ (Gasht-e Ershad) বা 'গাইডেন্স পেট্রোল'। এই ইউনিটের কাজ ছিল, মূলত ইরানের সংস্কৃতির ও হিজাব পরিধান নিয়ে দেশজুড়ে প্রচার চালানো।
কিন্তু, গত সেপ্টেম্বরে, ইরানে হিজাব-বিরোধী মুখ মাহশা আমিনিকে তুলে নিয়ে লকআপে রীতিমতো অত্যাচার চালায় এই নীতি পুলিশ। এই নীতি পুলিশের হেফাজতেই তাঁর মৃত্যু হয়। তারপর সারাদেশে 'বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান' ও 'নীতি পুলিশের' বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমনকি, কাতারে চলতি ফুটবল বিশ্বকাপের মাঠেও সেই চিত্র উঠে আসে।
ইরানের মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ এবং হিংসায় ১৮,০০০-এরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইরান বিষয়ক মার্কিন দূত রব ম্যালি। তিনি বলেন, বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিজেকে একটি 'দুষ্ট চক্রের' মধ্যে আটকে রেখেছে ইরানের নেতৃত্ব।
এদিকে, নীতি পুলিশ বিলুপ্তি নিয়ে ইরানের এক ইরানি আইনপ্রণেতা জানান, 'সরকার জনগণের আসল দাবির প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন