৫৩ বছর জেলে কাটানোর পর প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন প্রাক্তন নিউ ইয়র্ক সেনেটর রবার্ট এফ কেনেডির হত্যাকারী সিরহান সিরহান। ১৯৬৮ সালের ৬ জুন তিনি কেনেডিকে হত্যা করেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে তাঁর প্যারোলের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার নিহত সেনেটর রবার্ট এফ কেনেডির ছেলে জুনিয়ার ও ডগলাস কেনেডি তাঁদের বাবার হত্যাকারীর প্যারোলে সম্মতি জানান। বর্তমানে ৭৭ বছর বয়সী কেনেডির আততায়ী সিরহান সিরহান এই নিয়ে ১৬ বার প্যারোলের আবেদন করেছিলেন।
১৯৬৯ সালের মে মাস থেকে ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ কারেকশনস অ্যান্ড রিহাবিলিটেশন-এ আছেন প্যালেস্তিনীয় সিরহান সিরহান। ফারর্স্ট ডিগ্রি খুন এবং খুনের ইচ্ছায় নিগ্রহের মত গুরুতর অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত।
সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুসারে, শুক্রবারের ভার্চুয়াল শুনানিতে ডগলাস কেনেডি জানান, তাঁর দু’ বছর বয়সে তাঁর বাবাকে যে ব্যক্তি খুন করেছিলেন তাঁকে দেখে তিনি ‘বিহ্বল’। তিনি আরও জানিয়েছেন, আমি সারাজীবন ওই ব্যক্তির এবং তাঁর নামের ভয়ে কাটিয়েছি। আজ আমি কৃতজ্ঞ যে তাঁকে একজন মানুষ হিসেবে সহানুভূতি এবং ভালোবাসার যোগ্য হিসেবে দেখছি।
যদিও বোর্ডের পক্ষ থেকে প্যারোলের অনুমতি পাবার পরেও মুক্তি পাচ্ছেন না সিরহান সিরহান। তাঁর মুক্তি নির্ভর করছে ক্যালিফোর্নিয়ার গাভিন নিউজমের ওপর। প্যারোলের অনুমতির পরেও নিউজম তাঁকে মুক্তি নাও দিতে পারেন।
১৯৬৮ সালের ৫ জুন লস অ্যাঞ্জেলস-এর দ্য অ্যাম্বাসাডর হোটেলের রান্নাঘরে আমেরিকার ৬৪তম অ্যাটর্নি জেনারেল ও নিউ ইয়র্কের সেনেটর রবার্ট এফ কেনেডিকে গুলি করেন সিরহান সিরহান। ৬ জুন গুড সামারিটান হাসপাতালে মৃত্যু হয় কেনেডির। ওই সময় সিরহানের বয়স ছিল ২৪ বছর।
কে এই সিরহান বিশারা সিরহান?
কেনেডির হত্যাকারী সিরহান বিশারা সিরহান-এর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৯ মার্চ। জেরুজালেমের এক আরব ক্রিশ্চান পরিবারে তাঁর জন্ম। সিরহানের ১২ বছর বয়সে তাঁর পরিবার আমেরিকায় চলে আসেন। যদিও সিরহান কখনই আমেরিকান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি। ১৯৮৯ সালে সিরহান ডেভিড ফ্রস্টকে জানিয়েছিলেন, রবার্ট কেনেডিকে তাঁর হত্যা করার কারণ, কেনেডি ইজরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং প্যালেস্তাইনে আক্রমণ চালানোর জন্য তিনি ৫০টি বোমারু বিমান ইজরায়েলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। যদিও সিরহানের দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। বহু মানুষই বিশ্বাস করেন ঘটনার দিন সিরহান আদৌ গুলি চালাননি। তিনি পরিস্থিতির শিকার। তদন্তে জানা গেছিলো হত্যাকান্ডের দিন দুটি বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিলো। যে ঘটনায় কেনেডি ছাড়াও আরও পাঁচজন আহত হয়েছিলেন। যদিও একমাত্র কেনেডিরই মৃত্যু হয়।
১৯৬৯ সালের ১৭ এপ্রিল সিরহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং এর ৬ দিন পর তাঁর গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয়। যদিও তিন বছর পর এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। সিরহানের আইনজীবী লরেন্স টিটের বারবারই তাঁর আবেদনে জানিয়েছিলেন, সিরহান এই অপরাধ করেননি এবং এই বিচারকে তিনি সরকারি চক্রান্ত বলেও অভিহিত করেছিলেন। ২০০৫ সালে টিটেরের মৃত্যুর পর সিরহান অন্য কোনো আইনজীবীকে তাঁর পক্ষে সওয়াল চালাতে দেননি।
২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর নতুন ভাবে সিরহানের মামলা আদালতে তোলা হয় এবং দাবি করা হয় কেনেডির হত্যাকান্ডের সময় দুটি বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিলো। ওই তথ্যপ্রমাণে আরও দাবি করা হয় সিরহানের বন্দুকের গুলিতে কেনেডির মৃত্যু হয়নি। যদিও এই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। সেদিনের ঘটনায় আহত পল স্রেড ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁর জবানবন্দীতে জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন সিরহান কেনেডিকে খুন করেননি। অন্য কোনো দ্বিতীয় আততায়ী তাঁকে হত্যা করেছিলো। কোনো বিশেষ কারণে আসল অপরাধীকে আড়াল করতেই হয়তো সিরহানকে অপরাধী করা হয়েছে।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন