Kenya: জনবিরোধী আর্থিক বিলের প্রতিবাদ - প্রেসিডেন্ট রুটোর পদত্যাগের দাবিতে গণবিক্ষোভে উত্তাল কেনিয়া

People's Reporter: ১৮ জুন এক বিবৃতিতে CPK জানায়, “কেনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি প্রেসিডেন্ট রুটোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে, যা পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদের অধীনস্থ এজেন্ট হিসেবে তার আনুগত্য প্রকাশ করে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভে উত্তাল কেনিয়া
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভে উত্তাল কেনিয়াছবি কমিউনিস্ট পার্টি অফ কেনিয়ার এক্স হ্যান্ডেল পোষ্ট থেকে স্ক্রিনশট, গ্রাফিক্স আকাশ
Published on

যুব বিক্ষোভে উত্তাল কেনিয়া। মঙ্গলবার নাইরোবিতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে এই বিক্ষোভ চরম আকার নেয়। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের একাংশ জ্বালিয়ে দেয় এবং সাংসদরা বিক্ষোভের জেরে সংসদ ছাড়তে বাধ্য হন। সংবাদসংস্থা এপি প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, পুলিশ গুলি ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা নামানো হয়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে।

কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর আনা সাম্প্রতিক অর্থ বিল নিয়ে বিক্ষোভের সূত্রপাত। বিক্ষোভকারীদের মতে এই বিল পাশ হলে দেশের মানুষের আর্থিক দুর্দশা আরও বাড়বে। মঙ্গলবারই সংসদে এই বিল পাশ করানোর পরে বিক্ষোভ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। গতকাল সংসদের অধিবেশন বয়কট করে বিরোধীরা।

মূলত যুবদের উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম এই বিল বিরোধী প্রতিবাদ শুরু হয়। এরপর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন যুবকরা। গত ১৮ জুন প্রথম এই বিল সাধারণের জন্য প্রকাশ্যে আনা হলে চরম বিক্ষোভ শুরু হয়। নাইরোবি থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হলেও তা এখন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভ চলছে মোম্বাসা, এলডোরেটেও। উল্লেখযোগ্যভাবে এলডোরেটকে রাষ্ট্রপতি রুটোর জনসমর্থনের ঘাঁটি হিসেবে ধরা হয়।

জানা গেছে, এই অর্থ বিল পাশ হলে নিত্যব্যবহার্য জিনিসের ওপর কর বসবে। যার মধ্যে ডায়াপার থেকে শুরু করে জ্বালানি, ইন্টারনেট ডাটা, ব্যাঙ্কে টাকা পাঠানোকেও যুক্ত করা হয়েছে। কেনিয়া সরকারের মতে এই কর বসানো হলে অতিরিক্ত ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। যদিও বিক্ষোভকারীদের মতে এই বিল পাশ হলে দেশের মানুষের ওপর আর্থিক বোঝা আরও বাড়বে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এর আগে ২০২৩ সালেও এরকমই এক আইন পাশ করে বেতন, বাড়িভাড়ার ওপর কর বসানো হয়েছিল। যা নিয়ে তখনও তুমুল বিতর্ক দেখা দিলেও এবারের মত বিক্ষোভ তখন দেখা যায়নি।

কেনিয়া সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই কর জাতীয় দেনা পরিশোধের জন্য খুবই জরুরি। এই কর বসানো হলে বাজেট ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে এবং সরকার মসৃণ গতিতে চলবে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের মতে, পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যেই। এরপর মানুষের ওপর আরও করের বোঝা চাপানো হলে তা সামলানো অসম্ভব হয়ে যাবে।

কেনিয়ার ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এদিন এক বিবৃতিতে হিংসা প্রভাবিত এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই বিবৃতি অনুসারে - "বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, কেনিয়ার সমস্ত ভারতীয়কে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার, অপ্রয়োজনীয় চলাচল সীমিত করার এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ ও হিংসা প্রভাবিত এলাকাগুলি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।"

সাধারণ মানুষের দুর্দশা মুক্তির কথা প্রচার করে ২০২২ সালে ক্ষমতায় বসেন রুটো। যদিও এরপর থেকে তাঁর একের পর এক পদক্ষেপকে জনবিরোধী বলেই মনে করেছেন সে দেশের মানুষ। তাঁর একের পর এক প্রকল্পের জন্য টান পড়েছে কেনিয়াবাসীর পকেটে। তাঁর একাধিক পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেইমানি বলে মনে করেছে সে দেশের জনগণ। বিশেষ করে গত মে মাসে প্রেসিডেন্টের জন্য আলাদা বিমান থাকা সত্ত্বেও বিশেষ লাক্সারি চার্টার্ড বিমানে করে তাঁর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর দেশজুড়ে কড়া সমালোচনা শুরু হয়। পরে রুটো জানিয়েছিলেন এই বিমান সফরের খরচ বহন করেছেন তাঁর বিশিষ্ট বন্ধুরা। যদিও সেই বন্ধুদের নাম প্রকাশ করেননি রুটো।

গত ১৮ জুন কেনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে রুটোর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনা হয়। ওই বিবৃতিতে কমিউনিস্ট পার্টি অফ কেনিয়া (সিপিকে) জানায়, “কেনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি প্রেসিডেন্ট রুটোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে, যা পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদের অধীনস্থ এজেন্ট হিসেবে তার প্রকৃত আনুগত্য প্রকাশ করে। তার ওয়াশিংটন সফর এবং জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের ভাষণ সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত করে যে তিনি বিদেশী বাহিনী দ্বারা আটক হয়েছিলেন এবং যারা তাঁর ক্ষমতা দখলে সহায়তা করেছিল। এখন এই বিষয়টি আর কোনও জল্পনা নয় বরং একটি উজ্জ্বল সত্য হিসেবে সামনে এসেছে; রাষ্ট্রপতি রুটো পশ্চিমি শাসক শ্রেণীর পুতুল, প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি কেনিয়ার জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।”

ওই বিবৃতিতে সিপিকে আরও জানায়, অভ্যন্তরীণভাবে, রুটোর নীতিগুলি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যকে স্থায়ী করে। গণহত্যাকারী ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সাথে তাঁর প্রকাশ্য বন্ধুত্ব তাকে আন্তর্জাতিক নৃশংসতায় জড়িয়ে ফেলে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সাথে ন্যাটোর ছায়া যুদ্ধের জন্য রুটোর সমর্থন সিআইএ-পরিকল্পিত প্রচারের মুখপাত্র হিসাবে তার ভূমিকার উপর জোর দেয়। এই বিশ্বাসঘাতকতা অর্থনৈতিক ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত। যেখানে IMF এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের নির্দেশে আমাদের আর্থিক নীতিগুলি চালিত হয় এবং জনবিরোধী আর্থিক আইনগুলিকে সামনে এগিয়ে দেয় যা কেনিয়ার সার্বভৌমত্বের উপর বিদেশী স্বার্থকে উপকৃত করে।”

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভে উত্তাল কেনিয়া
France: ফ্রান্সে নতুন পপুলার ফ্রন্ট - দক্ষিণপন্থাকে আটকাতে এক ছাতার নিচে মধ্য বাম থেকে বাম
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভে উত্তাল কেনিয়া
UK Election 2024: ব্রিটেনের ভোটে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ঋষি সুনকের কনজারভেটিভ পার্টি! ইঙ্গিত সমীক্ষায়

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in