আদানি গোষ্ঠীর পতন অব্যাহত। বুধবার প্রকাশিত M3M হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট ২০২৩-এও সেই একই ছবি উঠে এসেছে। গত ২৪ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠী প্রসঙ্গে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর থেকে বিশ্বের ধনীদের তালিকায় একসময় দ্বিতীয় স্থানে থাকা গৌতম আদানি বর্তমানে ২৩ তম স্থানে নেমে এসেছেন। এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম ধনীদের তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে আছেন মুকেশ আম্বানি। হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট একথা জানিয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এইবছর ভারত থেকে নতুন বিলিওনেয়ার হিসেবে নাম যুক্ত হয়েছে ১৬ জনের। প্রয়াত রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার স্ত্রী রেখা ঝুনঝুনওয়ালা এই ১৬ জনের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন। ইটালী থেকে এই তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন ৯ জন। বিশ্বজুড়ে ৯৯টি শহরের ১৮টি শিল্পক্ষেত্রের ১৭৬ জন নতুনভাবে বিলিওনেয়ার তালিকায় ঢুকেছেন।
হুরুন রিপোর্ট অনুসারে গুজরাটের আহমেদাবাদ-ভিত্তিক ব্যবসায়ী গৌতম আদানি’র নীট সম্পদ গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বর্তমানে ৩৫% কমে ৫৩ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের পর গত বছরের অনুপাতে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৩০০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর। যার ফলে চীনের ঝং শানশানের কাছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনীর শিরোপাও হারাতে হয়েছে আদানিকে।
হুরুন রিপোর্টে বলা হয়েছে ২৪ জানুয়ারির পর থেকে এখনও পর্যন্ত আদানী গোষ্ঠীর সম্পদের মূল্য কমেছে ৬০%-র বেশি। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের আগে পর্যন্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনী ছিলেন গৌতম আদানি।
২৪ জানুয়ারী, হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে শেয়ার কারচুপি সহ যা যা অভিযোগ করা হয়েছিল তার সবই অস্বীকার করেছেন গৌতম আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু এই অস্বীকার সত্ত্বেও আদানী গোষ্ঠীর যে সমস্ত শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত আছে সেই সব শেয়ার বাজার মূল্যে ১৩০ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
২৮ বিলিয়ন ডলারের নিট লোকসানের সাথে, ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির থেকে নীচে নেমে গেছেন আদানি। এই মুহূর্তে গত ১ বছরে ২০% কমার পরেও মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদের মূল্য আনুমানিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গৌতম আদানির নীট সম্পদের পরিমাণ ৫৩ বিলিয়ন ডলার।
হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্টে যাঁরা ন্যূনতম ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদের অধিকারী তাঁদেরই নাম বিবেচনাযোগ্য। ২০২৩ M3M হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট-এর দ্বাদশ সংস্করণে গত বছরের তুলনায় আদানি নেমেছেন ১১ধাপ।
২৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ সহ, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ৮১ বছর বয়সী কর্ণধার সাইরাস পুনাওয়ালা ভারতের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছন। সাইরাস পুনাওয়ালা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রের বিলিয়নেয়ার।
২৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ সহ ৭৭ বছর বয়সী শিব নাদার এবং তাঁর পরিবার, এইচসিএল টেকনোলজিস, ২০২৩ হুরুন গ্লোবাল রিচ তালিকায় ভারতের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ১,১৬১ কোটি টাকার অনুদান দিয়ে শিব নাদার হুরুন ইন্ডিয়া ফিলানথ্রপি লিস্ট ২০২২ অনুযায়ী "ভারতের সবচেয়ে উদার খেতাব" পুনরুদ্ধার করেছেন৷ শিব নাদার পরোপকারের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
২৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের সাথে, ৭২ বছর বয়সী লক্ষ্মী এন মিত্তাল, সবচেয়ে ধনী ভারতীয় অভিবাসী। গত বছরের তুলনায় ৩ বিলিয়ন ডলার সম্পদ কমেছে এসপি হিন্দুজা এবং পরিবারের। তাঁদের বর্তমান নীট সম্পদ মূল্য ২০ বিলিয়ন ডলার।
১৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে, সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৬৭ বছর বয়সী দিলীপ সাংঘভি ও পরিবার সপ্তম স্থানে রয়েছে। তিনি ১৯৮৩ সালে সাইকিয়াট্রিক ওষুধ তৈরির জন্য সান ফার্মা শুরু করেন এবং একের পর এক অধিগ্রহণের দ্বারা কোম্পানিটি বৃদ্ধি করেন। দিলীপ সাংঘভি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রের বিলিয়নেয়ার।
১৬ বিলিয়ন ডলার সম্পদের সাথে, DMart-এর প্রতিষ্ঠাতা রাধাকিষাণ দামানি ও পরিবার, ৪০ ধাপ নেমে গেছেন এবং প্রথম ১০০ ধনীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকা অনুসারে মুকেশ আম্বানীর স্থান নবম। এই তালিকায় গৌতম আদানির স্থান ২৩। সাইরাস পুনাওয়ালার স্থান ৪৬ তম। শিব নাদারের ৫০ তম এবং লক্ষ্মী মিত্তাল আছেন ৭৬ তম স্থানে।
গত ১ বছরে বিশ্বের যেসব ধনীদের নীট সম্পদের উল্লেখযোগ্য হ্রাস হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে আছেন জেফ বেজোস। তাঁর সম্পদ কমেছে ৭০ বিলিয়ন ডলার। এলন মাস্কের সম্পদ কমেছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেরগেই ব্রিনের সম্পদ কমেছে ৪৪ বিলিয়ন ডলার। ল্যারি পেজের সম্পদ কমেছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। ম্যাকেঞ্জি স্কটের সম্পদ কমেছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার। গৌতম আদানির কমেছে ২৮ বিলিয়ন ডলার। মুকেশ আম্বানির কমেছে ২১ বিলিয়ন ডলার এবং জেং ইউকুনের সম্পদ কমেছে ১৭ বিলিয়ন ডলার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন