বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে অন্নের অভাব। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ভিক্ষ এবং অপুষ্টিও। বর্তমানে বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে ১ জন পেটে খিদে নিয়েই প্রতিরাতে ঘুমাতে যান। এমনকি এই মুহূর্তে পৃথিবীর ৫০টি দেশের প্রায় ৪৭ মিলিয়ন মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের থেকে আর মাত্র এক পা দূরে রয়েছে। সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করল জাতিসংঘ।
ইউনাইটেড নেশনস-এর খাদ্য বিভাগের প্রধান এই নিয়ে জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী একটি দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ৭০ কোটি মানুষ জানেনই না যে তারা আবার কখন খাবার খাবে কিংবা আদৌও খেতে পাবে কি না।
গত বৃহস্পতিবার UN-এর খাদ্য বিভাগ বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের (WFP) এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সিনডি ম্যাককেইন নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, “আমরা বর্তমানে একটি ঘটমান এবং দীর্ঘমেয়াদী সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছি, যার ফলে বিশ্বব্যাপী মানবিক চাহিদা বাড়ছে। এটাই এখন মানবসভ্যতার ‘নয়া বাস্তব’, এটাই এখন ‘নিউ নরমাল’। আগামী বেশ কয়েকবছর এর ফল ভুগতে হবে আমাদের।” প্রাক্তন ও প্রয়াত মার্কিন সেনেটর জন ম্যাককেইনের স্ত্রী আরও জানিয়েছেন, জাতিসংঘের কোষাগার ক্রমশ শূন্য হয়ে আসছে, ফলস্বরূপ খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। কারণ অনুদানের অভাবে বাধ্য হয়ে খাদ্য রেশনে কাটছাঁট করতে হয়েছে। এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও হিসেবী হতে হবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তামণ্ডলীর সামনে বিশ্ব খাদ্য প্রকল্প নিয়ে পেশ করা তাঁর রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের প্রায় ৪.৭ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের থেকে মাত্র একধাপ দূরে রয়েছে। আবার গোটা বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। রিপোর্ট আরও বলছে, বিশ্বের ৭৯টি দেশে যেখানে WFP (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম) কাজ করে, সেখানে এখনও অন্ততপক্ষে ৭৮.৩ কোটি মানুষ অভুক্ত অবস্থায় রাতে ঘুমাতে যান। পাশাপাশি, বিশ্বের প্রায় ৩৪.৫ কোটি মানুষের কাছে কোনওরকম খাদ্যের নিরাপত্তা নেই। ২০২১ সালে করোনা পরবর্তীকালেও সংখ্যাটা ছিল ২০ কোটি। গত দুই বছরে ওই সংখ্যাটা বেড়েছে প্রায় সারে ১৪ কোটি।
কিন্তু হঠাৎ করে খাদ্যের চাহিদা এইভাবে বাড়ার পিছনে কোন সমীকরণ কাজ করছে? কেনই বা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি? জাতিসংঘের খাদ্য প্রকল্প বিভাগ (WFP) জানিয়েছে, “বিশ্ব জুড়ে খাদ্যাভাব বাড়ার পিছনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘাত, অর্থনৈতিক ধাক্কা, চরমভাবাপন্ন জলবায়ু এবং সারের মূল্যবৃদ্ধির সম্মিলিত প্রভাব রয়েছে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন