গত বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার পর শিশু সহ প্রায় ১ কোটির বেশি মানুষ এখনও নিরাপদ পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন। মঙ্গলবার একথা জানিয়েছে ইউনিসেফ।
পাকিস্তানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ ফাদিল বলেছেন, "নিরাপদ পানীয় জল পাওয়া কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার।"
জিংহুয়া সংবাদমাধ্যম ফাদিলের বক্তব্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, "তবুও, প্রতিদিন, পাকিস্তানে লক্ষ লক্ষ মেয়ে এবং ছেলেরা প্রতিরোধযোগ্য জলবাহিত রোগ এবং এর ফলে তৈরি হওয়া অপুষ্টির বিরুদ্ধে একটি অসম যুদ্ধে লড়ছেন।" জানা যাচ্ছে, জলবাহিত রোগগুলির মধ্যে কলেরা, ডায়রিয়ার "ব্যাপক" প্রাদুর্ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে। এছাড়াও, ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া ক্রমশ বাড়ছে বলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই সংস্থা সতর্ক করেছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, উপযুক্ত বাথরুমের অভাবে "অনুপাতিকভাবে শিশু, কিশোরী ও মহিলারা সমস্যায় পড়ছেন। যারা প্রকাশ্যে মলত্যাগ করার সময় লজ্জা নিবারণ করতে পারছে না।” অনিরাপদ পানীয় জল এবং দুর্বল স্যানিটেশনও অপুষ্টির "মূল অন্তর্নিহিত কারণ" বলে জানানো হয়েছে।
ইউনিসেফ বিশেষভাবে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী সমস্ত শিশু মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ অপুষ্টির জন্য দায়ী, যেখানে অর্ধেক ক্ষেত্রে নিরাপদ পানীয় জল, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং ভাল স্বাস্থ্যবিধির অভাবের কারণে সংক্রমণ ঘটছে।
পাকিস্তানের বন্যা-কবলিত এলাকায় ১৫ লক্ষের বেশি শিশু ইতিমধ্যেই মারাত্মকরকমের অপুষ্টিতে ভুগছে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে ইউনিসেফ। দেশের মোট শিশু মৃত্যুর অর্ধেকের সাথে অপুষ্টি জড়িত।
গত বছর প্রচণ্ড মৌসুমী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ ভূমি জলের নীচে ডুবে যায় এবং কমপক্ষে ১,৭৩৯ জনের মৃত্যু হয়।
পাকিস্তানের বন্যায় সামগ্রিকভাবে ৩৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, বা প্রতি ৭জনের মধ্যে ১জন পাকিস্তানি এবং প্রায় ৪০ লক্ষ সাধারণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। যা দেশজুড়ে বড়ো মানবিক সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।
রাষ্ট্রসংঘ মঙ্গলবার জানিয়েছে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত, বিভিন্ন সংস্থা ৭০ লক্ষের বেশি বন্যা-দুর্গত পাকিস্তানিদের কাছে খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা পৌঁছেছে।
ইউনিসেফ এবং বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা এ পর্যন্ত প্রায় ১২ লক্ষ শিশু এবং পরিবারকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করেছে এবং ৪,৫০,০০০-এর বেশি মানুষকে জল সরবরাহ পুনর্বাসনে সহায়তা করেছে৷
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্থাটি বুধবারের বিশ্ব জল দিবসের আগে বন্যা কবলিত এলাকায় নিরাপদ পানীয় জল এবং যথাযথ বাথরুমের ব্যবস্থা করার জন্য অন্যান্য সংস্থার কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
ইউনিসেফের কাছে এই সংকট মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ১৭৩.৫ মিলিয়ন ডলারের ৫০ শতাংশেরও কম তহবিল রয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন