উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো না থাকার কারণে পর্তুগালের লিসবনে মৃত্যু হল গর্ভবতী এক ভারতীয় মহিলার। এই খবর জানার ৫ ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করলেন সেই দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্তা তেমিদো।
ভারত থেকে পর্তুগালে ঘুরতে গিয়েছিলেন ৩৪ বছরের ওই মহিলা। পর্তুগালে ঘুরে বেড়ানোর মাঝে পথের মধ্যেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। গত সপ্তাহে মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটে। প্রথমে তাঁকে ডে সান্টা মারিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে সাও ফ্রান্সিসকো জেভিয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে নিওনেটোলজি বিভাগে কোনো খালি বেড না থাকায় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ায় ফের তাঁকে অন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেই ধকল সহ্য করতে পারেননি তিনি। অবশেষে শনিবার মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনা প্রকাশে আসার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মার্তা। সেই কারণেই রাতারাতি তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে আরও দাবি করা হয়, মার্তার পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব অ্যান্তোনিও ল্যাসারদা সেলস এবং মারিয়া ডি ফাতিমা ফনসেকাও স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে হাসপাতালের সিজারিয়ান বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছিল। জরুরি ভিত্তিতেই সন্তান প্রসব করানো হয়েছে ওই মহিলার। নবজাতকের ওজন হয়েছে ৭২২ গ্রাম। প্রিম্যাচুরিটির কারণে তৎক্ষণাত তাঁকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র মারফত জানা গেছে, চিকিৎসকের অভাবে কিছুদিন আগেই পর্তুগালের হাসপাতালগুলির প্রসূতি বিভাগের এমারজেন্সি পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মার্তা। এই বিষয়টিকেই অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রসূতি মৃত্যুর এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা অতিমারীর সময় দক্ষ হাতে পর্তুগালের পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিলেন মার্তা। সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছিল তাঁর কাজ।
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্তোনিয়ো কোস্তা জানিয়েছেন, তিনি মার্তার ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন। সাথে মার্তাকে তাঁর কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো যত দ্রুত সম্ভব উন্নত করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, পর্তুগালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। প্রসূতি বিভাগের এমারজেন্সি পরিষেবা বন্ধ রাখার পর থেকে দেশের নানা প্রান্তে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। যার জেরে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ ক্রমাগত বাড়ছিল। ভারতীয় মহিলার মৃত্যু যেন নতুন করে সেই ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দিল।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদে নতুন কাউকে না নির্বাচিত করা পর্যন্ত সেই পদে থাকবেন মার্তা। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মন্ত্রি পরিষদ দ্বারা নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে বলে জানা গেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন