বিশ্বজুড়ে প্রায় ১১০ মিলিয়ন বা ১১ কোটি মানুষকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস রিফিউজি এজেন্সি (UNHCR) সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সুদানের গৃহযুদ্ধ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সম্প্রতি কয়েক লক্ষ মানুষ নিজেদের বাস্তু ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
UNHCR বুধবারই এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ইউ এন হাইকমিশনার ফর রিফিউজি ফিলিপো গ্রান্ডি সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের শেষ দিকে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা প্রায় ১৯ মিলিয়ন বেড়ে ১০৮.৪ মিলিয়নে পৌঁছে যায়। এরপর সুদানে গত ৮ সপ্তাহ ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে এই সংখ্যা ১১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, যেভাবে ক্রমাগত বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বাড়ছে তা সমাধানের কল্পনা করাও ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ফোরসড ডিসপ্লেসমেন্ট রিপোর্ট অনুসারে ২০১১-র সিরিয়া গৃহযুদ্ধ শুরুর আগের দুই দশকে বিশ্ব জুড়ে বাস্তুচ্যুত উদ্বাস্তুর সংখ্যা আনুমানিক ৪০ মিলিয়নের কাছাকাছি ছিল। কিন্তু এরপর থেকেই পরিস্থিতির কারণে বাস্তুচ্যুতর সংখ্যা দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং বর্তমানে তা দ্বিগুণেরও বেশি। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রতি ৭৪ জনের মধ্যে ১ জন উদ্বাস্তু।
গ্রান্ডি জানিয়েছেন, গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আর্থিক বৈষম্য, হিংসা এবং পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন বা বাস্তু ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে এই মুহূর্তে যত উদ্বাস্তু আছে এবং যাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন তাদের অর্ধেকের বেশি মানুষ সিরিয়া (৬.৫ মিলিয়ন), ইউক্রেন (৫.৭ মিলিয়ন) এবং আফগানিস্তানের (৫.৭ মিলিয়ন)।
কোনো দেশের নাম না করে তিনি এই বিষয়ে কড়া আন্তর্জাতিক আইন এবং বাস্তুচ্যুতদের সেই দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কড়া নির্দেশের পক্ষে সুপারিশ করেছেন।
যদিও গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা এই বিষয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসেন এবং অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের সেই সেই দেশে ফিরিয়ে দেবার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের রিফিউজি হাইকমিশনার।
রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে প্রায় ৬ মিলিয়ন উদ্বাস্তু বা বাস্তুচ্যুতকে তাঁদের দেশে বা বাস্তুতে ফেরানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৫.৭ মিলিয়ন মানুষ নিজেদের দেশের মধ্যেই বাস্তুহারা হয়েছিলেন এবং ৩,৩৯,৩০০ মানুষ উদ্বাস্তু হিসেবে অন্য দেশে বসবাস করতেন।
বাস্তুচ্যুত এবং উদ্বাস্তুদের মধ্যে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়স ৭ শতাংশ। যার মধ্যে ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪ শতাংশ মহিলা। ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৫২ শতাংশ। যার মধ্যে ২৬ শতাংশ পুরুষ এবং ২৬ শতাংশ মহিলা। ০ থেকে ১৭ বছর ব্যসীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৪০ শতাংশ। যার মধ্যে ২০ শতাংশ পুরুষ ও ২০ শতাংশ মহিলা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন