সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামীর (Father Stan Swamy) মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠেছে মার্কিন কংগ্রেসে (US Congress)। এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনাও পেশ হয়েছে।
এলগার পরিষদ মামলায় মুম্বাইয়ে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন, গত বছর ৫ জুলাই মৃত্যু হয় ৮৪ বছর বয়সি স্ট্যান স্বামীর। তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাবনা পেশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি হুয়ান ভার্গাস (Juan Vargas)।
গত মঙ্গলবার, স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু বার্ষিকীতে এক ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন ভার্গাস। আলোচনার বিষয় বস্তু ছিল - 'ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং তাদের রক্ষকদের বিচার: স্মরণে ফাদার স্ট্যানের মৃত্যু' (Prosecution of Religious Minorities and Their Defenders in India: Commemorating Father Stan's Death)। এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া-সহ একাধিক দেশের প্রতিনিধিরা।
এই আলোচনায় হুয়ান ভার্গাস বলেন, 'পুলিশি হেফাজতে থাকার সময়ে স্ট্যান স্বামীর উপর যে অত্যাচার হয়েছে তা ভেবে আমি স্তম্ভিত। মানবাধিকারের জন্য যিনি লড়েছেন তাঁর সঙ্গে এমন হিংসা এবং অবহেলা মেনে নেওয়া কঠিন।'
২০২১ সালের ৫ জুলাই, মুম্বাইয়ের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মারা যান স্ট্যান স্বামী। করোনা সংক্রমিত হবার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু, স্বামীর আইনজীবী বোম্বে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার আগে দশ দিনেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল তাঁর মক্কেলকে (পড়ুন - স্ট্যান স্বামীকে)।
২০২০ সালের অক্টোবর, এলগার পরিষদ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইউএপিএ (UAPA) আইনে স্ট্যান স্বামীকে রাঁচী থেকে গ্রেফতার করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। এরপর ৮৪ বছর বয়সে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিনের আবেদন করে একাধিকবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্ট্যান স্বামী। জেলে যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতেও আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। জানা যায়, পারকিনসন্স রোগসহ একাধিক রোগে ভুগছিলেন স্ট্যান স্বামী। একটি সিপার পাওয়ার জন্যও একাধিকবার আদালতে যেতে হয়েছে তাঁকে।
মার্কিন কংগ্রেসে তদন্তের প্রস্তাবনায় লেখা হয়েছে, 'বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ফাদার স্ট্যানের গ্রেফতার, হেফাজত ও মৃত্যু নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত করতে ভারতে উৎসাহিত করতে হবে। ৫ জুলাই, ২০২১ সালে হেফাজতে থাকাকালীন ফাদার স্ট্যানের মৃত্যু হয়।' একইসঙ্গে, প্রস্তাবনায় 'মানবাধিকার কর্মী ও বিরোধী রাজনীতিবিদদের নিশানা করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (UAPA) অপব্যবহার' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা প্রস্তাবনায়, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের তরফে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে, সুপ্রিম কোর্টের এই স্থগিতাদেশকে 'স্থায়ী করার’ জন্যও ভারতের আইন প্রণেতাদের আহ্বান করা হয়েছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের কার্যালয়, মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ প্রতিনিধি এবং মানবাধিকার নীতি ও মানবিক সহায়তার জার্মান কমিশনারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে ভারতের তরফে জানানো হয়, স্ট্যান স্বামীর ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন