একদিকে ইউক্রেন, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার বর্তমান সুদৃঢ় সম্পর্ক, এই দুই ইস্যু নিয়ে বিশেষ জল বইতে দিতে চাইছে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা। রাশিয়া সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতিনিধিরা।
রাশিয়া চায় না ন্যাটো জোটে ইউক্রেন থাকুক। চীন সফরে শুধু গ্যাস সরবরাহ নিয়ে নয়, কথা হয়েছে ইউক্রেন প্রসঙ্গে। এরইমধ্যেই বৃহস্পতিবার আমেরিকা অভিযোগ করেছে, ইউক্রেন দখল করতে চাইছে রাশিয়া। সেজন্য সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্রেমলিন।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও চীনকে আলোচনায় এনে ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাই চ্যালেঞ্জ ইউরোপীয় ইউনিয়নের। তাই রাশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত ফ্রান্স ও জার্মানির। পাশাপাশি ইউক্রেনেও যাবেন তাঁরা। ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোমবার রাশিয়ার মস্কোয়, মঙ্গলবার সেখান থেকে ইউক্রেনের কিয়েভে যাবেন। জার্মানির চ্যান্সেলর স্কোলজ আবার ১৪ ফেব্রুয়ারি কিয়েভে, পরদিন যাবেন রাশিয়ার মস্কোয়।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে পুতিনের বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বৈঠক চলছে। কিন্তু ইউক্রেনের পরিস্থিতির জন্য এই জরুরি বৈঠকের প্রয়োজন। ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরা এই বৈঠকের জন্য ফ্রান্সের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে রোমানিয়ায় সেনার সংখ্যাও বাড়িয়েছে ন্যাটো। প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্যাসের চাহিদা মেটাতে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল।
এদিকে, পুতিন ও জিনপিংয়ের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকার দেখে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, 'আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক' পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার অপেক্ষায় তাঁরা। ব্যবসা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা-সহ নানা ক্ষেত্রে গত এক দশকে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক যে সুদৃঢ় হয়েছে, তাতে দু'পক্ষের মধ্যে কথা বলার বিষয়ের কোনও অভাব নেই।
তবে ইউক্রেন নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকির মুখে পাশে থাকার জন্য চীনের কাছ থেকে পুতিন যে প্রতিশ্রুতি চাইবেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কারণ তিনি জানেন যে একমাত্র চীনই বাঁচানোর ক্ষমতা রাখে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া নেওয়ার পর আমেরিকা ও পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে প্রেসিডেন্ট পুতিন চীনের ওপরেই ভরসা করেছিলেন। হোয়াইট হাউসকে গুরুত্ব না দিয়ে বেজিং শুধু তেল এবং গ্যাস কেনা নিয়েই রাশিয়ার সঙ্গে চারশো' বিলিয়ন ডলারের (৪০,০০০ কোটি ডলার) চুক্তি সই করে। এই চুক্তি বাঁচিয়ে দেয় রাশিয়াকে অর্থনীতিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ফরেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (আইপিআরআই)-এর ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক ক্রিস মিলারের মতে, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে 'অবিচল ভূ-রাজনৈতিক মৈত্রী ও ঐক্যের' বার্তা দেওয়া হবে। আইপিআরআই ওয়েবসাইটে তিনি লিখেছেন, প্রধানত আমেরিকার ইস্যুতে ২০১৪ সালের পর গত আট বছরে চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
চিনের সবচেয়ে প্রভাবশালী কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচি সম্প্রতি রুশ-চীন সম্পর্ককে 'ইতিহাসের সর্বোত্তম' বলে বর্ণনা করেছেন। শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে 'সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু' বলে অভিহিত করেন। পুতিনও পাল্টা প্রশংসা করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন