পশ্চিমী দেশগুলির সর্তকতাকে বিশেষ পাত্তা দিল না রাশিয়া। ইউক্রেনের যে দুই অঞ্চল রুশপন্থী বলে পরিচিত, সেই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করল মস্কো। এই ঘোষণাকে উপলক্ষ করে রাশিয়ার এক টিভি চ্যানেলে দীর্ঘ ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে দোনেৎস্ক ও লুগানস্কের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আর তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।’ তবে রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে কূটনৈতিক মহল এক অন্য আশঙ্কা করতে শুরু করেছে। ওই মহলের মতে, যেহেতু পশ্চিমী দেশগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি রাশিয়া, তাই এই সিদ্ধান্তে পশ্চিমে সমর্থিত সরকারের সঙ্গে মস্কোর এবার একটা সংঘাত শুরু হতে পারে।
সোমবার সিকিউরিটি কাউন্সিলের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় পুতিনের। সেখানে দোনেৎস্ক ও লুগানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওই বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আপনাদের সবার মতামত জানলাম। আজই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এমনটাই জানা গিয়েছে রুশ সংবাদ সংস্থার সূত্রে।
এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানায়, পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দুই রুশপন্থী অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করতে পারেন। এব্যাপারে লিখিত নির্দেশ দেবেন তিনি। অন্যদিকে সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্র মারফত জানা গেছে, পুতিন এই সিদ্ধান্তের কথা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে জানিয়েছেন। যদিও টেলিফোনে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশের প্রধানের কেউই সম্মতি দেননি। তারই মধ্যে দুই অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করেন পুতিন। ক্রেমলিনের রুশপন্থী নেতাদের সঙ্গে পুতিন চুক্তিও স্বাক্ষর করেন। দীর্ঘ ভাষণের পর পুতিন রাশিয়ার সংসদের উচ্চ কক্ষকে এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে বলেন।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পাশাপাশি ইউক্রেনে রুশপন্থীদের বিরুদ্ধে সরকারের সামরিক অভিযান বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। হুঁশিয়ারি দিয়ে পুতিন বলেছেন, ‘অন্যথায়, রক্তপাতের দায় বর্তাবে ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন সরকারের ওপরে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক ইউক্রেনের সম্পূর্ণ রূপকার শুধু রাশিয়াই।'
কূটনৈতিক মহলের এক অংশের মতে, এই কৃতিত্বের স্বীকৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে যে টানাপোড়েন চলছে, তার অবসান ঘটাবে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া দখল করে, তারপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অন্য এক অংশ মনে করছে, এই সিদ্ধান্তে কূটনৈতিক সংঘাত বাড়বে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে শান্তিচুক্তি শেষ হওয়ায় ইউক্রেনে সেনাও পাঠাতে পারবে রাশিয়া। যদিও পুতিন সাফাই গেয়েছেন যে, দুই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ, যাঁদের কাছে রাশিয়ার পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদের সুরক্ষার্থে এই পদক্ষেপ। ইউক্রেনের হাতে এখন দুটি বিকল্প। হয় দুই অঞ্চলের অধিকার ছাড়তে হবে, নয়ত রাশিয়ান সেনা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন