সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে নিতে হবে। এমনই দাবি তুলে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। মঙ্গলবার এই আন্দোলনের জেরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ঢাকা-সহ গোটা দেশ জুড়ে মৃত্যু হয়েছে অনন্ত ছ’জনের। অভিযোগ, তাঁদের উপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের ছাত্রশাখাও হামলা চালিয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলো সূত্রে খবর, এই সংঘর্ষের ফলে চট্টগ্রামে নিহত হয়েছেন তিনজন, ঢাকাতে নিহত হয়েছেন দু’জন এবং রংপুরে নিহত হয়েছে একজন। অভিযোগ ওঠে, চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় সংরক্ষণবিরোধী ছাত্র-যুব মিছিলে গুলি চালানো হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এর ফলে নিহত হয়েছেন বিরোধী দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক মহম্মদ ওয়াসিম।
অন্যদিকে, ঢাকাতে কলেজ এবং সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলিগ ও ছাত্রলিগের নেতা কর্মীদের সংঘর্ষে দুই আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে এই আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত লাশের রাজনীতি করতে চায়। তাঁদের উসকানিতেই ছাত্র লিগ এই সহিংসতা ছড়িয়েছে গোটা দেশে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে একই ভাবে সংরক্ষণ তোলার দাবি তুলে বিক্ষোভ শুরু হয় গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। সেই সময় সরকারি চাকরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল।
কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ার পর শুধু জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছাড়া বাকি কোটা বাতিল করে দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আন্দোলন তুলে নেন পড়ুয়ারা। এরপর ২০২১ সালে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮ সালের সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশের বৈধতা তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এক মাসের জন্য গোটা বিষয়টির উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে। আদালত জানিয়েছে, হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করলে সেটা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৭ আগষ্ট। এরপরেও আন্দোলন তুলে নিতে নারাজ সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন