ভারতের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রে পালাবদল। শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় আসতে চলেছে কোনও বামপন্থী দল। এখনও পর্যন্ত ভোটগণনার গতিপ্রকৃতি অনুসারে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (People’s Liberation Front)-র শীর্ষ নেতা আনুরা কুমারা দিশানায়েকে এই নির্বাচনে জয়ী হতে চলেছেন। ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার-এর জোটের অধীনে নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন অনুরা দিশানায়েকে।
এখনও পর্যন্ত ১৬০ টি নির্বাচনী অঞ্চলের মধ্যে সবকটির ফলাফল সামনে এসেছে। গণনার ফলাফল অনুসারে আনুরা কুমার দিশানায়েকে পেয়েছেন ৫৬,৩৪,৯১৫ ভোট (৪২.৩১%)। সাজিথ প্রেমদাসা পেয়েছেন ৪৩,৬৩,০৩৫ ভোট (৩২.৭৬%)। রণিল বিক্রমসিঙ্ঘে পেয়েছেন ২২,৯৯,৭৬৭ ভোট (১৭.২৭%) এবং নামাল রাজাপক্ষে পেয়েছেন ৩,৪২,৭৮১ ভোট (২.৫৭%)।
এখনও পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার ভোট গণনা নিয়ে যে খবর পাওয়া গেছে তাতে কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় সে দেশের নির্বাচন কমিশন দ্বিতীয় দফায় গণনার নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান আর এম এ এল রথনায়েকে জানিয়েছেন অনুরা দিশানায়েকে এবং সাজিথ প্রেমদাসা এবারের নির্বাচনে সবথেকে বেশি ভোট পেয়েছেন। কিন্তু কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় পছন্দের ভোট গণনা চলছে। যা প্রথম গণনার ফলাফলের সঙ্গে যোগ করা হবে।
শ্রীলঙ্কার নির্বাচনী ইতিহাসে এই প্রথম দ্বিতীয় পছন্দের ভোট গণনা চলছে। ১৯৮২ থেকে এখনও পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় যে কটি নির্বাচন হয়েছে তার সবকটিতেই প্রথম দফার গণনাতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সে দেশের নির্বাচনী নিয়ম অনুসারে কোনও প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে গেলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয়।
এবারের নির্বাচনে প্রথম পছন্দের ভোট গণনায় কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। ফলে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পছন্দের ভোট গণনা। শ্রীলঙ্কায় ভোট দেবার সময় ভোটদাতাদের ব্যালটে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পছন্দ চিহ্নিত করে ভোট দিতে হয়। প্রথম পছন্দের ভোট কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে তখন প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই প্রার্থীর দ্বিতীয় পছন্দের প্রাপ্ত ভোট গণনা করার নিয়ম। এরপর যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পাবেন তাঁকেই নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে প্রবল জনবিক্ষোভ এবং অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার পর এটাই শ্রীলঙ্কার প্রথম নির্বাচন। যে নির্বাচনের প্রচারে বাম নেতা দিশানায়েকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের। এই নির্বাচনের ফলাফলের গতি প্রকৃতি প্রমাণ করেছে অর্থনৈতিকভাবে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার ভোটাররা আস্থা রেখেছেন বামপন্থায়।
যদিও আনুরা দিশানায়েকের এই জয় শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দেবে। আনুরার প্রচারে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মত বিষয়গুলি প্রাধান্য পেয়েছে। যে প্রশ্নে সাধারণ মানুষের বড়ো অংশ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
যদিও এই নির্বাচনী ফলাফলের এখনও যা গতিপ্রকৃতি তাতে তিনি বেশি ভোট পেয়েছেন সিংহলী অধ্যুষিত এলাকা থেকেই। তামিল এবং মুসলিম অধ্যুষিত ভান্নি, জাফনা, বাত্তিকালোয়া, ত্রিঙ্কোমালি, পুত্তালাম অঞ্চলে তাঁর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন সাজিথ প্রেমদাসা এবং রণিল বিক্রমসিঙ্ঘে। অন্যদিকে সিংহলী অধ্যুষিত হাম্নানটোটা প্রভৃতি জায়গায় বেশি ভোট পেয়েছেন আনুরা।
অর্থাৎ ভোটে জিতে রাষ্ট্রপতি হলেও তিনি তামিল অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হয়েছেন। অতীতে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের বিরুদ্ধে অভিযানে তাঁর দলের সমর্থনই এর প্রধান কারণ হতে পারে বলেই মনে করছে সে দেশের রাজনৈতিক মহল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন