শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নিলেন সদ্য নির্বাচন জয়ী আনুরা কুমার দিশানায়েকে। সোমবার সকালেই তিনি শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বামপন্থী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হলেন।
এদিন শপথ নেবার পরেই মার্কসবাদী লেনিনবাদী জনতা বিমুক্তি পেরামুনা দলের নেতা আনুরা দিশানায়েকে জানান, আমরা বিশ্বাস করিনা যে এই গভীর সমস্যা কোনও একটি রাজনৈতিক দল, কোনও একজন ব্যক্তির পক্ষে মেটানো সম্ভব। আমাদের এই সমস্যা থেকে বেরোতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আগেই বলেছি আমি কোনও জাদুকর নই। আমি একজন সাধারণ নাগরিক। এরকম বহু জিনিস আছে যেগুলো আমি জানি এবং বেশ কিছু জিনিস আছে যেগুলো আমি জানিনা। আমার লক্ষ্য এই সমস্ত কিছুকে একজায়গায় এনে জানার পরিধি বাড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
শপথ নেবার পরে এই বাম নেতা আরও বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি স্বচ্ছ প্রশাসনের লক্ষ্য কাজ করবো। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে মানুষের মতকে সম্মান জানিয়ে আমি সকলের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবো এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
গতকালের নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পরেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দীনেশ গুণবর্ধনে। যার ফলে এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করতে পারবেন রাষ্ট্রপতি আনুরা দিশানায়েকে।
শ্রীলঙ্কার সদ্যসমাপ্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলনেতা সাজিথ প্রেমদাসাকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী আনুরা কুমারা দিশানায়েকে। এই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৩৮ জন। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে রণিল বিক্রমসিঙ্ঘেও।
অতীতে সশস্ত্র সংগ্রামের পথে থাকলেও বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরুর দিকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে বেরিয়ে আসে জনতা বিমুক্তি পেরামুনা। গত শতাব্দীর সাত এবং আট-এর দশকে দু’বার সশস্ত্র অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় জেভিপি।
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি আনুরা দিশানায়েকে চিনের ঘনিষ্ঠ বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। অতীতে তাঁর একাধিক মন্তব্য এবং সিদ্ধান্ত ভারতের বিরুদ্ধেই গেছে। যদিও তিনি নির্বাচিত হবার পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকেও আনুরা দিশানায়েকেকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
আনুরা কুমার দিশানায়েকের রাজনৈতিক উত্থান
আনুরা কুমার দিশানায়েকেকে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের’ প্রার্থী হিসাবে প্রচার করা হয়েছিল। তিনি ঘনিষ্ঠ বৃত্তে একেডি নামেই পরিচিত। ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কায় তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সময় আরাগালয়া বিক্ষোভ আন্দোলনে তিনি সফল নেতৃত্বের দেন। তাঁর সফল নেতৃত্বেই ক্ষমতাচ্যুত হন গোটাবায়া রাজাপক্ষে।
১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুরা জেলার থামবুতেগামাতে তাঁর জন্ম। নিজেকে সবসময়েই তিনি "শ্রমজীবী-শ্রেণীর পিতামাতার" সন্তান হিসাবে বলে থাকেন।
মার্কসবাদী-লেনিনবাদী নেতা কলেজ জীবনে ছাত্র রাজনীতির অংশ ছিলেন। পার্টির সরকারবিরোধী বিদ্রোহের সময় তিনি ১৯৮৭ সালে জনতা বিমুক্তি পেরামুনাতে যোগ দেন। ২০০১ সালে তিনি প্রথম সংসদে নির্বাচিত হন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি দলের শীর্ষে উঠে আসেন। ২০১৯ সালে তিনি JVP-র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাত্র ৩.২ শতাংশ ভোট পান।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন