জরুরী অবস্থার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ৩৬ ঘন্টার দীর্ঘ কারফিউ আরোপ করা হয়েছে। এবার দ্বীপরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী রবিবারের জন্য পরিকল্পিত সরকার বিরোধী বিক্ষোভ আটকাতে দেশে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ প্রযুক্তি মন্ত্রক ঘোষণা করেছে যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নির্দেশে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্লক করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রবিবার প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বিরোধী দল। নিষেধাজ্ঞা জারির আগে "#GoHomeRajapaksas" এবং "#GotaGoHome" হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং করছিলো।
টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (টিআরসি) ডিরেক্টর জেনারেল জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুরোধে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সাময়িকভাবে ব্লক করা হয়েছে।
সরকার বিরোধী বিক্ষোভ আটকাতে শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় তৎপরতা। সাইবার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণকারী একটি ওয়াচডগ গ্রুপ নেট ব্লকস এক টুইটে জানিয়েছে: "রিয়েল-টাইম নেটওয়ার্ক ডেটা অনুসারে শ্রীলঙ্কা দেশব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্ল্যাকআউট আরোপ করেছে। টুইটার সহ সমস্ত প্ল্যাটফর্মে অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রাম ব্লক করা হয়েছে।"
ইতিমধ্যে এক সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, থিসারা অনুরুদ্ধ বান্দারাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা গেছে, তিনিই #GotaGoHome হ্যাশট্যাগ তৈরি করেছেন। তাঁকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিপুল সংখ্যক সমাজকর্মী, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ থানা ঘেরাও করলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জ্বালানি, এলপিজি, ১৩-ঘন্টা বিদ্যুতহীন থাকা, মুদ্রাস্ফীতির কারণে দুধের গুঁড়া জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি, ডলার সংকট সহ একাধিক অর্থনৈতিক সংকটের বোঝা প্রভৃতি কারণে রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তাঁর অবিলম্বে পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের বাড়ি ঘেরাও করে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে, রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা জারি করে সামরিক বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করার অনুমতি দেয়। এরপর শনিবার সন্ধ্যা থেকে ৩৬ ঘন্টার জন্য দেশব্যাপী কারফিউ কার্যকর হয়।
যদিও বিরোধীরা, নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী এবং আইন বিশেষজ্ঞরা রাজাপক্ষের পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। সরকার অভিযোগ করেছে যে বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভের সময় 'চরমপন্থী' গোষ্ঠী হিংসার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় 'আরব স্প্রিং' প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। যে ঘটনায় অন্তত ৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হিংসা কান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে, শ্রীলঙ্কায় জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কোঅরডিনেটর হানা সিঙ্গার-হামডি টুইট করে জানান: "আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি এবং শ্রীলঙ্কায় ক্রমশ হিংসা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন। সব গোষ্ঠীর কাছে আমরা সংযমের আহ্বান জানাচ্ছি।"
এছাড়াও অন্য এক টুইট বার্তায় শ্রীলঙ্কায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং বলেছেন: "শ্রীলঙ্কানদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে - গণতান্ত্রিক অভিব্যক্তির জন্য তা অপরিহার্য।" "আমি পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করছি, এবং আশা করি আগামী দিনগুলিতে সব পক্ষই সংযম দেখাবেন। এই মুহূর্তে ভুক্তভোগীদের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ত্রাণ অনেক বেশি প্রয়োজন।"
রবিবার এক ঘোষণায়, শ্রীলঙ্কার পাবলিক ইউটিলিটি কমিশন (PUCSL) বলেছে যে ১৩ ঘন্টার বিদ্যুত ছাঁটাই কমিয়ে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট করা হবে। ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের অধীনে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল শনিবার কলম্বো বন্দরে পৌঁছেছে৷
জানুয়ারি থেকে, ডলারের মজুদ কমে আসা এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারত শ্রীলঙ্কাকে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছে৷
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন