সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এবার নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে কোটা সংস্কারের আন্দোলন মঞ্চ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার ভোররাতে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে একথা ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। নাহিদ জানিয়েছেন, মুহাম্মদ ইউনুস এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন।
সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল, সেনা-সমর্থিত বা রাষ্ট্রপতি শাসিত কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না। নতুন সরকারের রূপরেখা গঠনের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁরা এখনই একটি রূপরেখা ঘোষণা করছেন।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি টেলিভিশন কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটানো হল। কেবল ব্যক্তিকে সরালেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য দিয়ে এ ধরনের ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়, সেই কাঠামোরও বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকার হবে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের প্রস্তাবিত। সেই জাতীয় সরকারে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের অংশ থাকবে। নাগরিক সমাজ-সহ নানা পেশার মানুষ ও নানা পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা এবং সেই সরকারে কারা থাকবেন, সেই নামগুলি ঘোষণা করব। অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিক দ্বারা সমর্থিত বা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আর কোনও ধরনের সরকারকে আমরা সমর্থন করব না। সেটা হতে পারে সেনা-সমর্থিত সরকার বা জরুরি অবস্থা দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হতে পারে— এ ধরনের কোনও সরকারকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না।”
কে এই ড. মুহাম্মদ ইউনুস?
১৯৪০ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ ইউনুস। ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পিএইচডি শেষ করার পর ইউনূস বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হতে যান।
২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য নোবেল পুরস্কার জেতেন মুহাম্মদ ইউনুস। লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাঁর অগ্রণী কাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। যদিও শেখ হাসিনা সরকার বরাবরই প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেছে।
ইউসুফের সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে ইউনুসকে ছ’মাসের জেলের সাজা শুনিয়েছিল ঢাকার আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার ১৯০ টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন