সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর গুলির লড়াইয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে সুদান। গত তিনদিনে, দুই পক্ষের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২০০ জনের, আর, আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৮০০-র অধিক। এই সংঘর্ষ থেকে রেহাই পায়নি রাজধানী খার্তুমের একাধিক হাসপাতাল। ফলে, স্বাভাবিকভাবে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের ফলেই সুদানে শাসন ক্ষমতার হাত বদল হয়েছিল। সেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন দেশের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (Abdel Fattah al-Burhan) এবং তাঁর ডেপুটি মহম্মদ হামদান ডাগলো (Mohamed Hamdan Daglo), যিনি আবার সুদানের শক্তিশালী আধা সামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’ (RSF)-এর শীর্ষ পদে রয়েছেন।
জানা গিয়েছে, এবার সুদানের সেনাপ্রধান আবদুল ফতেহ আল-বুরহানের এবং তাঁর ডেপুটি তথা আধাসেনা প্রধান মহাম্মদ হামদান ডাগলোর মধ্যে ক্ষমতার দখল নিয়ে লড়াই চলছে। দেশের আধাসামরিক বাহিনী- ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’কে (RSF) সেনাবাহিনীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি নিয়েই শুরু হয়েছে এই লড়াই। ধীরে ধীরে এই সংঘর্ষ গৃহযুদ্ধের আকার নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছে সুদানের বায়ুসেনা। আবার, এই বায়ুসেনাই সুদানের আধাসামরিক বাহিনী- ‘ব়্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’-এর (RSF) ঘাঁটিগুলিতে আকাশপথে লাগাতার গোলাবর্ষণ করে চলেছে। আকাশপথে দিনভর ঘুরছে যুদ্ধবিমান।
এমনিতে সুদানে গৃহযুদ্ধ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার দেশের দুই নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তা নজিরবিহীন। এই লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। ইতিমধ্যেই সংঘর্ষে লাগাম টানতে কূটনৈতিক স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে সুদানের অধিকাংশ মানুষই রমজান মাসের রোজা পালন করছেন। তার মধ্যেই এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সুদানের রাজধানী খার্তুমের বাসিন্দারা। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ট্যাঙ্ক, ঘন ঘন বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে এলাকা। ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। শুধু তাই নয়, আকাশপথেও প্রতিপক্ষ শিবিরে হামলা চালানো শুরু হচ্ছে। চলছে গোলাগুলি।
হাতেগোনা যে কয়েকটি দোকান খোলা রয়েছে, সেখানেই জ্বালানি এবং পাউরুটির মতো খাবারের জন্য প্রাণ হাতে নিয়ে ভিড় করছেন বাসিন্দারা। তার মধ্যে আবার বিদ্যুৎ সংযোগও ঠিক মতো থাকছে না। এই প্রবল গোলাগুলি এবং আকাশপথে হামলার জেরে সুদানের রাজধানীতে একাধিক হাসপাতালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাষ্ট্রসংঘের দূত ভলকার পার্থেস (Volker Perthes) এক জরুরী বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, সুদানে কমপক্ষে ১৮৫ জন নিহত এবং ১৮০০ জন আহত হয়েছেন।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই জটিল, তাই ভারসাম্য খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন