মার্কিন মুলুকে ফের বর্ণ বিদ্বেষের শিকার হলেন চার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা। টেক্সাসের প্ল্যানোর সিক্সটি ভাইন রেস্তোরাঁর বাইরে পার্কিং লটে ওই চার মহিলাকে অকথ্য ভাষায় বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য ও মারধর করেছেন এক মহিলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে।
অভিযুক্ত মহিলার নাম এসমেরালদা আপটন। তিনি একজন মেক্সিকান-আমেরিকান। বুধবার গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার সেটি ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা গেছে, আপটন আমেরিকাবাসী চার ভারতীয় বংশোদ্ভূদত মহিলাকে 'গো ব্যাক টু ইন্ডিয়া' অর্থাৎ 'ভারতে ফিরে যেতে' বলছেন। তাঁর দাবি, ওই চারজন মহিলা আমেরিকার নাগরিক নন, তাঁরা ভারতীয়।
সূত্রের খবর, আমেরিকার স্থানীয় সময় ৪টে নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে। সাড়ে পাঁচ মিনিটের ওই ভিডিওতে, অভিযুক্ত মহিলাটিকে এক ভারতীয় মহিলার মুখে আঘাত করতে দেখা গেছে। এমনকি, সেই সময় ঘটনাটির লাইভ করার চেষ্টা করায় দু'জন মহিলার ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। লাইভ বন্ধ না করলে তাঁদের গুলি করে খুন করার হুমকি দেন অভিযুক্ত।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে অভিযুক্তকে উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে বলতে শোনা গেছে, "যেখানেই যাই, সেখানেই তোমাদের মতো ভারতীয়দের পাওয়া যায়। ভারত যদি এতই মহান, তোমরা এখানে কী করছ?" ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করতে থাকা অপর এক মহিলাকেও তিনি হুমকির সুরে বলেন, "তোমার ফোনটা অফ করো। না হলে আমি গুলি করে দেব।"
ভিডিওতে নিজেকে মেক্সিকান-আমেরিকান বলে পরিচয় দিয়েছেন আপটন। চারজন মহিলাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকলে তাঁদের মধ্যে একজন আপটনকে বলেন, "তুমি তো মেক্সিকান, তাহলে কেন মেক্সিকোতে ফিরে যাচ্ছ না?" যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার।
দ্রুত খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় আপটনকে। তাঁর বিরুদ্ধে হামলা, শারীরিক নিগ্রহ এবং সন্ত্রাসবাদী মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে টেক্সাসে। পুলিশ জানিয়েছে, এই অপরাধকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। ঘৃণাজনিত অপরাধের পাশাপাশি অন্যান্য ধারাতেও তাঁকে অভিযুক্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার, দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, প্রশাসনকে আপটনের বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি তারা আপটনকে "আততায়ী" হিসাবে আখ্যা দিয়েছে।
CAIR-র কার্যনির্বাহী পরিচালক ফয়জান সৈয়দ বলেন, "প্ল্যানোতে চার ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান মহিলার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক হুমকি এবং শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা সত্যিই আতঙ্কজনক। উত্তর টেক্সাসে এই ধরনের ঘৃণার কোনও স্থান নেই। আমরা এই ঘটনাটিকে 'ঘৃণামূলক অপরাধ' হিসাবে তদন্ত করার জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছি।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন