প্রাণ বাঁচাবেন না পেট ভরাবেন? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের কাছে। ঘর থেকে বেরোলে প্রাণে বাঁচার সম্ভাবনা থাকবেনা। গুলি খেয়ে মরতে হবে। আর ঘরে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। কোথায় যাবেন, কী করবেন? বাড়িতে ফোন করলে সন্তানের এই প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে পারছেন না বাংলা এক প্রান্তে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার বাড়িতে বসে থাকা বাবা-মা। আর মেয়ে অনন্যা পাইক কথা বলছেন কিয়েভের এক ব্যাংকার থেকে।
ইউক্রেন থেকে যদি কোনওভাবে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, বা রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছনো যায়, তাহলে হয়তো ঘরে ফেরার সম্ভাবনা অনেক বেশি উজ্জ্বল হবে। কিন্তু সীমান্তে ভারতীয়দেরই বেছে বেছে মারধর করা হচ্ছে। নয়তো হেনস্থা করা হচ্ছে। এমন অভিযোগে জানিয়ে আগেই সেখানে আটকে পড়া পড়ুয়ারা নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। তা দেখে বাড়িতে বসে থাকা বাবা-মায়েদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের কাছে কোনও সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ।
প্রধানমন্ত্রীর সোমবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে চার মন্ত্রীকে ইউক্রেনের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতে আদতে পড়ুয়াদের ঘরে ফেরার পর কতটা সুগম হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অনন্যা জানতে পেরেছেন সীমান্তে কী দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। যাঁরা ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁরাই বারণ করছেন সেখানে যেতে।
এদিকে কেন্দ্র দাবি করেছে, ইউক্রেন থেকে তিন দিনে এয়ার ইন্ডিয়ায় এখনও পর্যন্ত মোট ১৩৯৬ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে ভারত থেকে প্রথম নির্দেশিকা জারির পর সে দেশ থেকে ৮০০০ ভারতীয় ফিরে এসেছেন। ইউক্রেনের আকাশপথ বন্ধ। তাই এখন ভরসা প্রতিবেশী দেশগুলির আকাশপথ। তাই কোনওমতে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরির সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। একদিকে প্রবল ঠান্ডা। অন্যদিকে খাবার জল না থাকা, অর্থসংকট, উপরি পাওনা হিসেবে জুটছে সেনা পুলিশের মারধর, অত্যাচার।
সামি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রেসিডেন্ট দীক্ষা পান্ডে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমাদের উপর রাগের কারণ কি? মেয়েদের চুল টেনে মাটিতে ফেলা হচ্ছে। সীমান্তে রীতিমতো অত্যাচার চলছে। ভারতীয় দূতাবাসের ভূমিকার নিন্দা করে বলেন, নির্দেশনায় বলা হয়েছে কিয়েভ থেকে পশ্চিমের শহরগুলিতে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ট্রেন রয়েছে কিন্তু এখন কি ট্রেনে যাওয়া সম্ভব? ঠিকমতো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রেনে যাওয়া হবে কী করে? আমাদের জীবনের কোনো মূল্যই নেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন